সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা

নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা ধরে সদর উপজেলার সাহেপ্রতাব এলাকার ক্যাম্পাস চত্বরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রথম বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার আবারও বিক্ষোভ মিছিল করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় আজও হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। তিন দিন ধরে বিভিন্ন বর্ষের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনই ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নোটিশ বোর্ডে টানানো সেমিস্টার ফির তালিকা থেকে জানা গেছে, প্রথম বর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ হাজার ৫৭৫ টাকা, দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টারে ৪ হাজার ২৭৫ টাকা, তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৩ হাজার ৯৭৫ টাকা এবং চতুর্থ বর্ষের সপ্তম ও অষ্টম সেমিস্টারে ৩ হাজার ৩৭৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এই হিসাবে শিক্ষার্থীদের কোর্স শেষ করতে চার বছরে আটবার সেমিস্টার ফি হিসেবে মোট ৩২ হাজার ৪০০ টাকা জমা দিতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি কমানোর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা তাঁত বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
গুলজার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তাঁত বোর্ডের অধীন অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাঁদের চেয়ে অর্ধেক বেতন ও সেমিস্টার ফি দেন। সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল করা হচ্ছে। গতকাল থেকে বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। আজ বৃহস্পতিবার
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যতবারই এই দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে গেছেন, ততবারই অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, খণ্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ায় সেমিস্টার ফি বেশি নিতে হচ্ছে। অথচ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়েও তাঁরা কেন অন্যান্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চেয়ে দ্বিগুণ ফি দেবেন? প্রতিষ্ঠার এক যুগ পরেও যদি সরকারিভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া না যায়, সেটা সরকার ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায় তাঁরা কেন বহন করবেন। অবিলম্বে সেমিস্টার ফি কমিয়ে আনা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গুলজার হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যান। এ সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আন্দোলন করলে তো তোমাদেরই পড়াশোনার ক্ষতি, আসো, আমরা বসে কথা বলি।’ পরে কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি দল কথা বলতে গেলে জানানো হয়, ‘তোমাদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা যাচ্ছে না, সময় লাগবে। আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাইলে যেতে পারো, তবে এতে কোনো লাভ হবে না।’ পরে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে আবার বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ষষ্ঠ সেমিস্টারের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকদের দেওয়া আশ্বাস আমরা আপাতত বিশ্বাস করছি না। আগামী রোববার আবার আমরা বিক্ষোভ মিছিল করব। এরই মধ্যে যদি দাবি আদায় না হয়, তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করব। এর শেষ না দেখে আমরা থামছি না।’

জানতে চাইলে নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গুলজার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি কমানোর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা তাঁত বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’