২৮ জুলাই বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন শিক্ষক মাহরীন, আজ ফিরলেন লাশ হয়ে
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মাহরীন চৌধুরীর আগামী ২৮ জুলাই গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। পরে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এলাকার কয়েকজনকে কল করে বলেন, এ মাসে আসতে পারছেন না। পরের মাসে আসবেন। এর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। আজ মঙ্গলবার গ্রামের বাড়িতে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মাহরীন চৌধুরীর বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকার পৌর এলাকায়। সেই বাড়িতে গেলে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যরা কেউ গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। মাঝে মাঝে তাঁরা আসেন।
মাহরীন চৌধুরী বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাঁদের পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ পৌরসভার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সামাদ বলেন, মাহরীন চৌধুরীরা দুই ভাই, দুই বোন। গ্রামের বাড়িতে তাঁদের কেউ থাকেন না। তিনি বাড়ি দেখাশোনা করেন। মাহরীন চৌধুরী গত ২১ জুন সর্বশেষ গ্রামের বাড়িতে এসে তিন দিন ছিলেন। তিনি যে কলেজের সভাপতি, ওই কলেজের একটি সভায় যোগ দিতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। আগামী ২৮ জুলাই তাঁর গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল। গতকালই কল করে বলেন, ২৮ তারিখ আসতে পারবেন না, পরে আসবেন। কিন্তু এর আগেই তিনি লাশ হয়ে এলেন।
বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিষ্ঠানের ফটকে টাঙানো মাহরীন চৌধুরীর শোক ব্যানার। কলেজে সুনসান নীরবতা, রাষ্ট্রীয় শোক দিবস উপলক্ষে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা। শিক্ষক-কর্মচারীদের বুকে কালো ব্যাজ।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মহুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল মাহরীন চৌধুরী এই প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় প্রতিদিনই মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নিতেন। গত ২২ জুন তিনি কলেজের একটি সভায় অংশ নেন। আগামী ২৮ জুলাই কলেজের অভিভাবক সভা ও কলেজের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার জন্য তাঁর আসার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল কল দিয়ে বলেন, পরের মাসে আসবেন। তাঁরা যেন ২৮ তারিখের সভাটি করে নেন। এর কিছু সময় পর তাঁরা দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর খবর পান।
প্রতিবেশী আবদুস সাত্তার বলেন, মাহরীন চৌধুরীরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন না ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন ঈদে-অনুষ্ঠানে আসেন। শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। যে কলেজে তিনি সভাপতি হয়েছেন, ওই কলেজটি তাঁদেরই দাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লাশবাহী গাড়িতে মাহরীন চৌধুরীর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় অশ্রুশিক্ত চোখে স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে শেষবিদায় জানান। বিকেল ৪টার দিকে বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
মাহরীন চৌধুরীর দুই ছেলে। বড় ছেলে মিয়াত চৌধুরী দশম শ্রেণিতে পড়ে। সাইফ চৌধুরী ছোট। স্বামী মনছুর হেলাল প্রাইড গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক। মাহরীন চৌধুরীর বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ২০১৪ সালে এবং মা ছাবেরা চৌধুরী ২০২০ সালে মারা যান।