পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা, দগ্ধ বাবা-ছেলে হাসপাতালে

পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন মহিন উদ্দীন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় এক ব্যক্তি তাঁর শিশুসন্তান ও নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ভাড়ারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আর শিশুটির বাবাকে আটক করে পুলিশ জেলা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

অগ্নিদগ্ধ শিশু তুহিন হোসেন (৯) স্থানীয় ভাড়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর বাবার নাম মহিন উদ্দিন (৪৫)।

সদর থানা-পুলিশ, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভাব-অনটনের সংসার ছিল দিনমজুর মহিন উদ্দিন ও শিউলি বেগমের (৩৫)। সংসারে সচ্ছলতার জন্য প্রায় দেড় বছর আগে কাজের জন্য শিউলি সৌদি আরবে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় ময়মনসিংহের রাসেল মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে শিউলির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে টাকাপয়সা পাঠানো বন্ধ করে দেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শিউলি দেশের বাড়িতে আসেন। এরপর গত ৮ জানুয়ারি মহিন ও শিশুসন্তানকে ফেলে রেখে পরিচিত ব্যক্তিকে বিয়ে করে চলে যান। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশায় ছিলেন মহিন। এই ক্ষোভ ও হতাশার কারণে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিশুসন্তান ও নিজের শরীরের পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মহিন। এরপর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাঁদের শরীরের আগুন নেভান। তবে ততক্ষণে ছেলের শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। এ ছাড়া মহিনের মুখ, দুই হাত ও গলা ঝলসে যায়।

পরে প্রতিবেশীরা শিশুটিকে পাশের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে দগ্ধ মহিনকে আটক করে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে জেলা সদর হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে মহিন উদ্দিনকে চিকিৎসাধীন অবস্থা দেখা যায়। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ কনস্টেবল। মহিন উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমাগো রাইখ্যা ওই ব্যক্তিরে বিয়ে করে চইল্যা গ্যাছে। আমি আমার জীবন রাখবার চাই নাই। তাই আগুন দিয়্যা নিজে আত্মহত্যা করবার চাইছিলাম।’

সন্তানকে কেন আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে চাইলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মহিন উদ্দিন দাবি করেন, তিনি ছেলেকে হত্যা করতে চাননি। ছেলে পেছনে আইসা দাঁড়াইলে তিনি তা লক্ষ করেননি। পরে পেট্রল ঢালার সময় সন্তানের শরীরে লেগে যায়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে দুইজনের শরীরেই আগুন ধরে যায়।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাবুল হোসেন বলেন, দাম্পত্য কলহের জেরে শিশুসন্তান ও নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, পুলিশ পাহারায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছুটা সুস্থ হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।