‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দিতে সাঁতারে নেমেছেন ২ নারীসহ ৪৩ জন

‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাঁতারে নেমেছেন ২ নারীসহ ৪৩ সাঁতারু। বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকতেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফে ‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাঁতারে নেমেছেন ২ নারীসহ ৪৩ জন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে তাঁরা সাঁতার শুরু করেছেন। সাঁতার প্রতিযোগিতাটির উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী।

দুই নারীর একজন ভারতের রচনা শর্মা এবং আরেকজন বাংলাদেশের এম এস টি শোহাগী আক্তার। কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে স্রোতোধারাটির নাম ‘বাংলা চ্যানেল’। এই চ্যানেলের দূরত্ব ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার। সাঁতার শেষ হবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতে।

এবার এই সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’। আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২৩’। সহযোগিতায় আছে ভিসাথিং, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, সরকার এগ্রো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাঁতারে অংশ নিতে গত সোম, মঙ্গল ও গতকাল বুধবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে সাঁতারুরা দল বেঁধে অনুশীলন করেন।

বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। এখন পর্যন্ত ১৯ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। আজ সফল হলে ২০ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার একক রেকর্ড গড়বেন তিনি।

লিপটন সরকার বলেন, এই সাঁতার আন্তর্জাতিক রীতি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক সাঁতারুর জন্য বোট ও উদ্ধারকর্মী আছেন। ধারাবাহিকভাবে এই নৌপথে সাঁতার হচ্ছে। প্রতিবারই সাঁতারুদের অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয়। বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলা চ্যানেলে প্রতিবছর সাঁতারের আয়োজন করে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার।

ভারতীয় নারী রচনা শর্মা ও বাংলাদেশি নারী এম এস টি শোহাগী আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

এবারের সাঁতারুরা হলেন ফজলুল কবির সিনা, লিপটন সরকার, মো. মনিরুজ্জামান, আয়রনম্যানখ্যাত মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত, শেখ মাহবুব উর রহমান, আল্লামা দিদার, সালাহ উদ্দিন, মো. কামাল হোসেন, জিহাদ হুসেন, আবাদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, মাহাদী হাসান, আবদুল্লাহ আল সাবিত, এস এম শারিয়ার মাহমুদ, হুমায়েদ ইছাহাক মুন, রচনা শর্মা, আতিকুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি চৌধুরী, আবদুল মতিন, জয়তু দাস, মইজ উদ্দিন, ফরিদ আহমেদ খান, আবদুল ইলা, মোহাম্মদ তামিম পারভেজ, মুরাদ হোসেন, গোলাম হাফিজ, সবুজ কুমার বর্মণ, নাদিম মাহমুদ, মাহমুদুল হাসান, হাসান ইমাম, জামিল হোসেন, জাফর সাদাক, শরভ শমাদ্দার, মুশা আহমেদ, নাসির উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, আবুল্লাহ আল রোমান, সুমন বালা, ফারুক হোসেন, এম এস টি শোহাগী আক্তার, মো. নাজমুজ সাকিব ও উজ্জ্বল চৌধুরী।

আয়রনম্যান মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত বলেন, ‘এবার আমার দশমবারের মতো সাঁতার। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাঁতার প্রতিযোগিতা। আমি প্রতিবারই অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করি।’

সাঁতারে নামার আগ মুহূর্তে। বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া মুদ্রসৈকতে
ছবি: প্রথম আলো

ভারতীয় সাঁতারু রচনা শর্মা জানান, তিনি সাঁতার ও ট্রায়াথলন কোচ। কয়েক বছর আগে যখন তিনি বাংলা চ্যানেল সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, তখনই তিনি এটি সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু মাঝখানে কোভিডের কারণে হয়ে ওঠেনি। এবার তিনি বাংলা চ্যানেল সাঁতারে অংশ নিতে পেরে রোমাঞ্চিত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আসলে এই সাঁতার প্রতিযোগিতা প্রশংসার দাবিদার। ইংলিশ চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলা চ্যানেলও বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর কোনো না কোনো বিদেশি এই চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছেন। এই সাঁতারের আয়োজন সফল করতে ভবিষ্যতে উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির সিনা ও সালমান সাইদ।