‘এই ওয়ার্ডের শতভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হতো, কিন্তু একটি বিশেষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন হয়নি। এ জন্য আমরা খুবই হতাশ ও বিব্রত।’ এই বক্তব্য খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল হকের। একই অভিযোগ এলাকাবাসীরও। তাঁরা এলাকার খুঁড়ে রাখা রাস্তার কাজ না করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এই ওয়ার্ডে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সদর দপ্তর, বিজিবি-১ ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের কার্যালয়, সারের বাফার গুদাম ও খাদ্যগুদাম প্রভৃতি। সারা দেশে যে ৯টি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় হচ্ছে, তার একটি এই ওয়ার্ডে পড়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা জামানের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ২৮ হাজার ৮৫৬ জন। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল হক ওরফে সুমন। তিনি রাজশাহী মহানগরের শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
নগরের অন্যান্য ওয়ার্ডে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা এলাকাবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সেঁটেছেন কিন্তু এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি। তবে শোনা যাচ্ছে, সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান ওরফে টিটু ও মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন ওরফে বাবু প্রার্থী হতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডের অসম্পূর্ণ উন্নয়ন কাজ নিয়ে ওয়ার্ডের নাগরিকদের অসন্তোষ রয়েছে। ছয় মাসেরও বেশি আগে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক খুঁড়ে রেখে ঠিকাদার চলে গেছেন। ওয়ার্ডের ১ নম্বর সড়কেরও একই অবস্থা। এই সড়কের একটি চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় নজরুল ইসলাম (৬০) নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘৩০ বছর ধরে তিনি এই ওয়ার্ডে রিকশা চালাচ্ছেন। ডানে–বাঁয়ে বহু রাস্তা আছে। এই রাস্তার নাম ১ নম্বর রাখা হয়েছে। চলাচলের গুরুত্বের দিক দিয়ে এই রাস্তা ওয়ার্ডের ১ নম্বর। অথচ এই রোডে রিকশায় উঠলে রোগীরা কাঁদতে থাকে। ঠেকা খায়, আঘাত পায়। আমরা আশা করেছিলাম, ড্রেনটা একটু উঁচা করবে, রাস্তাটাও একটু উঁচা হবে।’
চা–দোকানি ওয়াসি আহাম্মেদ বললেন, বৃষ্টি হলে এই সড়ক দিয়ে হাঁটা যায় না। সামাদ ডাক্তারের চেম্বার থেকে খোদা বক্সের মোড় পর্যন্ত একই হাল।
ওয়ার্ডের হাজরাপুকুর পাবনাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একইভাবে রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তাটি একটু চওড়া করা হয়েছে। তাতে খোয়া বিছানো হয়েছে কিন্তু কার্পেটিং করা হয়নি। সেখানে একটি চায়ের দোকানের সামনে কয়েকজন লোক বসেছিলেন। সুবহান শেখ নামের একজন রিকশাচালক বললেন, ‘রাস্তা খুঁড়ে রেখে গেছে। এক মাসের মধ্যেই না কি হবে। এখন বছরের কাছাকাছি হচ্ছে, সেই এক মাস আর পুজতেছে না।’
তৌহিদুল হক ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর হিসেবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডকে একটি পরিকল্পিত ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যে ওয়ার্ড এলাকায় ৮০-৯০ ভাগ রাস্তা ও নালার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনোদনের জন্য ছোটবনগ্রাম এলাকায় শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ চলমান আছে, ছোটবনগ্রাম এলাকায় ১৫ বিঘা ভূমি অধিগ্রহণ করে প্রস্তাবিত কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের সব কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন সম্পন্ন করা হয়েছে, রেলওয়ে মাঠসংলগ্ন এলাকায় অত্যাধুনিক ডাস্টবিন করা হয়েছে। শতভাগ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়েছে।’
তৌহিদুল হক আরও বলেন, ‘ওয়ার্ডের শতভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হতো, কিন্তু একটি বিশেষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন হয়নি। এ জন্য আমরা খুবই হতাশ ও বিব্রত হয়েছি। এ ছাড়া আরেক ঠিকাদারের কারণে স্টেডিয়াম থেকে শালবাগান পারহাউজ মোড় পর্যন্ত সেকেন্ডারি ড্রেনের পাশ দিয়ে ১৮ ফিটের রাস্তাটি সম্পন্ন হয়নি। অথচ একই টেন্ডারে অন্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বিজিবি মার্কেট থেকে ছোটবনগ্রাম বাইপাস পর্যন্ত রাস্তাটি তিন বছর আগেই সম্পন্ন হয়েছে।’
জনগণের আস্থা শতভাগ অর্জন করার করেছেন বলে দাবি করেন কাউন্সিলর তৌহিদুল হক। আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ইতিমধ্যেই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়ে তৌহিদুল হক বলেন, ‘জনগণের আস্থা অর্জন করে নিজ নিজ পরিকল্পনা তুলে ধরে সবাই মিলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’