শিশু হৃদয় হত্যার বিচার চেয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা
শরীয়তপুর জেলা শহরে শিশু হৃদয় খান ওরফে নিবিড় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের শহীদ মিনার চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে হয়।
এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন ডোমসার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ও হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ সময় শিশুটির মা ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শিশু হৃদয় খান শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার মালয়েশিয়াপ্রবাসী মনির খানের ছেলে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ৩১ জুলাই হৃদয়কে (১১) অপহরণ করা হয়। তাঁকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয় দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর মুক্তিপণ হিসেবে হৃদয়ের মায়ের কাছে মুঠোফোনে কল করে ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১ আগস্ট ভোরে খিলগাঁও এলাকার একটি ইটভাটার পাশের একটি নির্জন স্থান থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরে শিশুটির দাদা আজগর আলী খান বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলায় আটক চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁরা হলেন সিয়াম (২০), শাকিল গাজি (১৮), শাওন চৌকাদার (২০) ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। এর মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিক্ষোভ-মিছিল ও মানববন্ধন শেষে আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে যান হৃদয়ের মা নিপা আক্তার ও পরিবারের সদস্যরা। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাইফুল ইসলাম মজুমদার তাঁদের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে নিপা আক্তার সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
হৃদয়ের নানা বাবু খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হৃদয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কারা জড়িত আছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার অনুরোধ করেছি পুলিশকে। আমার মেয়েটি ছেলের শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ ছেলের জন্য কাঁদে।’
হৃদয়ের চাচা জাকির হোসেন খান বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে লাশ গুম করার পর ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। মুক্তিপণের জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিপণ নেওয়া যদি উদ্দেশ্য হতো, তাহলে হৃদয়কে হত্যা করা হলো কেন? হত্যার পর কেন মুক্তিপণ চাইল। এসব প্রশ্নের জবাব ও রহস্য পুলিশকে খুঁজতে হবে। পুলিশ চারজনকে আটক করেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এটা মানতে পারছি না।’
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার চারজনকে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিন আসামি। তাঁরা হলেন সিয়াম, শাকিল গাজি, শাওন চৌকাদার ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। আসামি তিনজনকে জেলা কারাগারে ও একজন কিশোর হওয়ায় তাকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। এখনো ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।