তাল ও খেজুরগাছগুলো উপড়ে ফেলা হলো

সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামানের নির্দেশে এসব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

রাস্তা নির্মাণের অজুহাতে দেড় শতাধিক তাল ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের জৌতা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর বাউফলে একটি মাটির রাস্তা নির্মাণের নামে কমপক্ষে দেড় শতাধিক তালগাছ ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় শ্রমিক দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করার নিয়ম থাকলেও এক্সকাভেটর দিয়ে কাজ করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই উপড়ে ফেলা হয়েছে ওই সব তালগাছ ও খেজুরগাছ। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি চাম্বুলগাছও উপড়ে ফেলা হয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের জৌতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান ওরফে লিটু মোল্লার নির্দেশে এসব গাছ এক্সকাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটা হলে শ্রমিকেরা উপকৃত হতেন। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব গাছগুলো উপড়ে ফেলতে হতো না। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ১৪ মেট্রিক টন গমের বিনিময়ে শ্রমিকদের দিয়ে বাউফল সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জৌতা গ্রামের আনছার বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ইসমাইল ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ ফুট মাটির সড়ক নির্মাণের কথা। সরকারিভাবে ১৪ মেট্রিক টন গমের মূল্য ৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ওই কাজের দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামরুজ্জামান ওরফে লিটু মোল্লা।

তাল ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান বলেন, সড়কের মধ্যে ছিল বলে কিছু তালগাছ ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আর গাছগুলো বুড়ো হয়ে গেছে, ৪০-৫০ বছর আগের রোপণ করা।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় আনছার বিশ্বাসের বাড়ির সামনে পাকা সড়ক থেকে পশ্চিম দিকে ইসমাইল ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত মাটির সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ। সড়কটির নির্মাণকাজ করতে গিয়ে সড়কের দুই পাশের ৯২টি ছোট-বড় তালগাছ ও ৫১টি খেজুরগাছ, চাম্বুলগাছসহ দেড় শতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো এখনো সড়কের পাশে পড়ে আছে। উপড়ে ফেলা তালগাছে তাল ধরেছিল। সেসব তাল কেটে শিশু-কিশোরেরা শাঁস বের করে খাচ্ছে। উপড়ে ফেলা অধিকাংশ খেজুরগাছেও ধরেছিল প্রচুর খেজুর।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে তালগাছ ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেললে তাঁদের কী করার আছে?

সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যদের বিশেষ বরাদ্দের কাজ তাঁর কাছের বিশেষ লোক দিয়েই করিয়েছেন। কাজের বিষয়ে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। নিজের খেয়ালখুশিমতো তালগাছ ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা খুবই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজিদুর রহমান বলেন, ‘আমি কোনো গাছ কাটার অনুমতি দিইনি। আর আমি অনুমতি দিতেও পারি না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’