অবশেষে পাঁচ দিন পর মেরামত হলো কয়রার দশালিয়া বেড়িবাঁধ

শনিবার সকাল থেকেই স্থানীয় জনগণ বাঁধের স্থানে হাজির হন। মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বাঁধের কাজে আসার আহ্বান জানানো হয়।

খুলনার কয়রা উপজেলার দশালিয়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ অবশেষে মেরামত করা হয়েছে। শনিবার সকালে এলাকার তিন শতাধিক মানুষ বাঁধটি মেরামতে অংশ নেন। দুপুরের জোয়ারের আগে তাঁরা বাঁধ মেরামতকাজ সম্পন্ন করেন। ফলে ভেঙে যাওয়ার পাঁচ দিন পর লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকেই স্থানীয় জনগণ বাঁধের স্থানে হাজির হন। মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বাঁধের কাজে আসার আহ্বান জানানো হয়। নিজেদের সম্পদ রক্ষার তাগিদে ভাঙা বাঁধের কাছে কোদাল হাতে জড়ো হতে শুরু করেন মানুষ। পাউবোর কর্মকর্তারা এ সময় প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য ৮০ টাকা করে মজুরি দেওয়ার ঘোষণা দেন। নদীতে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলেই শুরু হয় কাজ। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি কেটে ও বস্তায় বালু ভোরে বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা চলে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে জোয়ারের চাপে গত সোমবার ভোরে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। এ ছাড়া আরও ১৭টি স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে নোনাপানি ঢোকে। পরে শুধু দশালিয়া বাঁধটি বাদে সব স্থানের বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করে নোনাপানির প্রবেশ ঠেকিয়ে দেন এলাকাবাসী। তবে দশালিয়ায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করা যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার ওই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এলাকাবাসী। ওই দিনও দুপুরের জোয়ারের আগে বাঁধের ভাঙা অংশে মাটি ফেলে পানি আটকে দেওয়া হয়। পরে বাঁধের দুই পাশে প্রতিরক্ষায় বালুর বস্তা সরবরাহ নিয়ে জটিলতায় ফের ভেঙে যায় ওই বাঁধ।

এলাকাবাসী জানান, বাঁধটি মেরামত না হলে আগামী ভরা কটালে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হতো। যে কারণে স্থানীয় ও বহিরাগত মানুষ বাঁধ মেরামতকাজে এগিয়ে আসেন। তা ছাড়া পাউবো কর্মকর্তারা এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা গেছে।

বাঁধ মেরামতকাজে অংশ নেওয়া মহারাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের রিমালের দুই দিন পর জোয়ারের চাপ কমলে স্থানীয় মানুষ বাঁধটি মেরামতে এগিয়ে আসেন। সেদিন বাঁধ মেরামতকাজের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করা গেলেও এক বালু ব্যবসায়ীর অসহযোগিতার কারণে তা ভেসে যায়। শনিবার প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখে সকাল থেকে ফের কাজ শুরু করে দুপুরের জোয়ারের আগে মেরামতকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

বাঁধ মেরামতে আসা আনারুল ইসলাম বলেন, ‘এক দিন আয় না করলে আমাদের সংসার চলে না, তবু বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে এসেছি। বাঁধে আসার পর স্যাররা কাজ করলে টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। টাকা দেক আর না দেক, আমরা না করলে এ বাঁধ বাঁধতে অনেক দেরি হয়ে যেত। তখন এলাকায় আর থাকার মতো পরিস্থিতি থাকত না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টানা কয়েক দিন কাজ করার পরে বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় খুশি সবাই।’

পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, বাঁধ মেরামতে কয়েকবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তাই এবার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মেরামতকাজ শুরু করা হয়। পাউবো, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবার বাঁধটি প্রাথমিকভাবে মেরামত করা হয়েছে। এখন আর নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশের ভয় নেই।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে বাঁধ নির্মাণে এত দেরি হয়েছে। পাঁচ দিন ঘাম ঝরিয়ে কয়রার সাধারণ মানুষ দশালিয়া বাঁধটি আটকাতে পেরেছে। এবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রতিনিয়ত সংস্কারকাজ অব্যাহত রাখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধটি তদারক করা হোক। বেড়িবাঁধ সংস্কার না করে যত উন্নয়নই করা হোক না কেন, তা ভেসে যাবে পানির সঙ্গে। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হওয়া উচিত এসব বেড়িবাঁধ সংস্কারের মাধ্যমে।