‘কী নিয়া বাছুম, ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি সবাই চইল্লা গেল’

প্রবাসী মোবারকের পরিবারের পাঁচ সদস্যকে দাফন করতে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি পাঁচটি কবর খোঁড়া হয়েছে। জানাজার প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে যেতে এক মাস আগে দেশে এসেছিলেন ইতালিপ্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন। স্ত্রী-সন্তানদের ভিসার কাজও শেষ করেছিলেন। ২২ মার্চ ইতালি যাওয়ার কথা। ইতালি ফেরার আগে আজ শুক্রবার পুরো পরিবার নিয়ে গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের আগুন তাঁদের জীবনে কাল হয়ে এসেছে। মোবারক গ্রামে ফিরছেন, তবে লাশ হয়ে। আগুনে মোবারকসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

মোবারকের মা হেলেনা বেগম (৭৫) ছেলের পরিবারের সব সদস্যের মারা যাওয়ার এমন খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিলাপ করতে করতে হেলেনা বেগম বলছিলেন, ‘আমি কী নিয়া বাছুম? আমার ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি সবাই চিরতরে চইল্লা গেছে। আমি থাইক্কা কী করুম? আমার কী অইব?’

প্রবাসী মোবারকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে। বেইলি রোডের আগুনে মোবারক হোসেনসহ তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪২), বড় মেয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সৈয়দা ফাতেমা তুজ জহুরা (১৯), ছোট মেয়ে স্কুলশিক্ষার্থী সৈয়দা আমেনা আক্তার (১৩) ও একমাত্র ছেলে স্কুলপড়ুয়া সৈয়দ আবদুল্লাহ (৮) নিহত হন। মোবারকের স্ত্রী-সন্তানেরা ঢাকায় থাকতেন।

আরও পড়ুন
মোবারকের মা হেলেনা বেগম (৭৫) ছেলের পরিবারের সব সদস্যের মারা যাওয়ার খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন
ছবি: প্রথম আলো

স্বজনেরা জানান, সৈয়দ মোবারক হোসেন ১৫-১৬ বছর ধরে ইতালিপ্রবাসী। এর আগে সিঙ্গাপুরে থাকতেন। বড় ভাই সোয়েব হাসান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইতালিতে থাকেন। সোয়েব হাসানের সহায়তায় মোবারক ইতালিতে যান। সেখানে ব্যবসা করতেন। ৩০ জানুয়ারি স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ইতালি নিয়ে যেতে দেশে আসেন। এ জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছিলেন। সর্বশেষ বৃদ্ধা মা ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আজ সকালে শাহবাজপুর গ্রামে আসার কথা ছিল তাঁর।

শুক্রবার শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পাড়া–প্রতিবেশীরা মোবারকদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন। স্বজনেরা আহাজারি করছেন। পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি পাঁচটি কবর খোঁড়া হয়েছে। জানাজার প্রস্তুতি চলছে। আসর নামাজের পর গ্রামের মসজিদের সামনে তাঁদের একসঙ্গে জানাজা হওয়ার কথা আছে।

আরও পড়ুন

মোবারক হোসেনের ছোটবেলার বন্ধু দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মোবারক খুবই বিনয়ী ছিলেন। বাড়িতে এলে পরিচিত সবার সঙ্গেই দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। তাঁর এমন বিদায়ে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর সামনে আসছে নানা মর্মস্পর্শী ঘটনা। কেউ ভবনটির রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন পরিবারসহ, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ কেউ ভবনটিতে কাজ করে সংসার চালাতেন।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ৪৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আরও জানিয়েছেন, ১২ জন চিকিৎসাধীন। তাঁরা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। এর মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ৩৮ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন