রংপুরে হিযবুত তাওহীদের অনুষ্ঠান নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের পবিত্রঝাড় দোকানিপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় হিযবুত তাওহীদের ৩৯ নেতা–কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হিযবুত তাওহীদের লোকজন তাঁদের এলাকায় ইসলামবিরোধী কার্যক্রম করছিল। তাঁরা তাদের এগুলো না করতে বলেছিলেন। তারা বন্ধ করতে চেয়েও করেনি। এ ঘটনায় নামাজের পর প্রায় ৫৫০ মুসল্লি সেখানে যান। কিন্তু হিযবুত তাওহীদের সদস্যরা তাঁদের ওপর চড়াও হন ও হুমকি দেন। তাঁরা নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ করেন। পরে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে গেলে তাঁরা গুলি করে এবং অস্ত্র দিয়ে মুসল্লিদের কুপিয়ে জখম করে।
মামলার তথ্য নিশ্চিত করে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের ৭ জন আটক আছে। ওসি জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে।
গতকাল সোমবার পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদাম এলাকায় হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে হিযবুত তাওহীদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ‘এলাকাবাসীর’ সংঘর্ষ হয়। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এদিকে আজ সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সার্জারি ওয়ার্ডে হিযবুত তাওহীদের ৭ সদস্য চিকিৎসাধীন। কেউ মেঝেতে বসা। কেউ শুয়ে। হাতে হাতকড়া পরানো। তাঁদের পাহারা দিচ্ছেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
হিযবুত তাওহীদের এক সদস্য বলেন, আবুল কালাম (৬০) নামে তাঁদের এক সমর্থককে রড দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গতকাল তাঁকে রশি দিয়ে হাসপাতালের বিছানায় বেঁধে রাখা হয়। তবে আজ সকালে রশি খুলে দিয়ে হাতকড়া পরানো হয়।
জানতে চাইলে ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আইনের দৃষ্টিতে নারী বা মারাত্মক কেউ অসুস্থ থাকলে মানবিক বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু অপরাধীকে হাতকড়া পরাতে হবে।
তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো সন্দিগ্ধ আসামি কেউ যদি চিকিৎসাধীন থাকেন, তাঁকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে রাখতে হবে। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে কিংবা ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার যে চর্চা আমরা দেখছি, সেটা মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।