দুর্ঘটনা এড়াতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ

মহাসড়কের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা-পুলিশ ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে। 

২০২২ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে যাওয়া চার মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৭টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪০ জন। দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কের প্রায় ৭৮ কিলোমিটার এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদচারী-সেতু ও সড়ক বিভাজক নির্মাণ করা হয়েছে। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনা কমাতে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের সচেতন হতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বাড়াতে আজ সারা দেশে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য—‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়ক, পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়ক ও ঢাকা-নাটোর মহাসড়ক চলে গেছে। এসব মহাসড়কের ৭৮ কিলোমিটার এলাকায় হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। মহাসড়কের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা সাতটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হচ্ছে নলকা সেতু, চান্দাইকোনার ভূঁইয়াগাঁতী বাজার, পিংকি পেট্রলপাম্পের সামনে, বোয়ালিয়া বাজার, সরিষাকোল, শ্যামলী পাড়া ও হামকুরিয়া এলাকা।

এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নানা রকম সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে হাইওয়ে পুলিশ। ইতিমধ্যে তারা এ মহাসড়কের পাশে ১০টি বিদ্যালয়ে অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সড়ক পারাপারের নিয়ম, ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক চিহ্ন সম্পর্কে জানাচ্ছে। গত ১ বছরে প্রায় ৩০০ চালক ও চালকের সহযোগীকে তারা তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল কবির বলেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত মামলা ও জরিমানা করা হয় বলে জানান। এ ছাড়া স্পিডগানের মাধ্যমে গাড়ির গতিও মাপা হয়।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মহাসড়কে দুর্ঘটনা হয়েছে ৪৮টি। এতে নিহত হয়েছে ২৯ জন ও আহত হয়েছে ২১ জন। এসব ঘটনার বিপরীতে মামলা হয়েছে ২২টি। ২০২১ সালে ৯২টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫৭ আর মামলা হয়েছে ৪৫টি । আর ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা হয়েছে ৬৭টি। এতে নিহত হয়েছে ৪০ জন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩৭টি।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যেসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়, সেগুলোই কেবল হিসাবে রাখা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাইরেও দুর্ঘটনা থাকতে পারে। আর হাসপাতালে কেউ মারা গেলে তার হিসাব তাদের কাছে থাকে না। তবে তাদের নেওয়া পদক্ষেপই যে দুর্ঘটনা রোধ করতে পারবে, তা নয়। এ জন্য দরকার সবার সচেতনতা। চালক, যাত্রী, পথচারী—সবাই সতর্ক ও সচেতন না হলে দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব নয়।

গতকাল শুক্রবার সকালে দেখা যায়, উল্লাপাড়া পৌর এলাকার শ্যামলী পাড়া এলাকায় একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মহাসড়কে সড়ক বিভাজকও রয়েছে। কিন্তু মানুষ পদচারী-সেতু দিয়ে না গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছে। 

সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালকদের দায়ী করলে চলবে না, পথচারীও এখানে অনেকাংশে দায়ী। সড়কে ফুটপাত না থাকলে পথচারীদের ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। এ ছাড়া বেশ কিছু নির্দেশনা আছে, তা তারা মানে না।

হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (বগুড়া অঞ্চল) মুন্সী সাহাব উদ্দিন বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটি সমাধানের কাজ করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, হাইওয়ে পুলিশের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়কের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্ক বাণী ও চিহ্নসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। নানা উদ্যোগের কারণে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমছে।