মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার, এই বিভাজনের মাধ্যমে দেশকে বিভাজন করেছিলেন হাসিনা: নাহিদ

এনসিপির পথসভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ মঙ্গলবার ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরেছবি: প্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার—এই বিভাজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশকে বিভাজন করে রেখেছিলেন। এই মুজিববাদী আদর্শ ৫০ বছর ধরে দেশকে বিভাজন করে রেখেছিল। ২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই বিভাজনকে আমরা তোয়াক্কা না করে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম।’

আজ মঙ্গলবার ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে এনসিপির পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ সর্বজনের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যে বাংলাদেশ হবে শ্রমিকের বাংলাদেশ, কৃষকের বাংলাদেশ, মধ্যবিত্তের বাংলাদেশ, আমজনতার বাংলাদেশ, ভোলাবাসীর বাংলাদেশ।’

এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা ভোলায় এসে পদযাত্রায় অংশ নেন। তাঁরা ভোলা শহর প্রদক্ষিণ করেন। পরে বেলা ৩টার দিকে ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরের পথসভায় অংশ নেন।

পথসভা সঞ্চালনায় ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির মুখ্য সংগঠক সালমা আক্তার, ভোলার আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ১৪ জুলাই রাত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজনৈতিক দিকে রূপলাভ করে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমে এসেছিল। আজকে তাঁদের সম্মান জানাই। জুলাইয়ের নারীদের সম্মান জানাই।’ তিনি বলেন, ‘সেদিন আন্দোলনকারীদের শেখ হাসিনা রাজাকারের নাতিপুতি বলে গালি দিয়েছিল। সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিল আমাদের বোনেরা। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের বোনদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল। অত্যাচার চালানো হয়েছিল; কিন্তু আমাদের বোনেরা পিছু হটেননি। আমাদের ভাইয়েরা পিছু হটেনি। তারা প্রতিরোধ তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্কুল–মাদ্রাসার ছাত্ররা যোগ দিয়েছিল। সঙ্গে ছিল শিক্ষক সমাজ, অভিভাবক। সাধারণ মানুষের জনরোষেই শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছিল।’

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘ভোলাবাসী দীর্ঘদিন ভোলা-বরিশাল সেতুর জন্য লড়াই করছে। আপনাদের দাবির প্রতি আমরা সমর্থন জানাই, সংহতি জানাই। ভোলার সঙ্গে অন্য জেলার দূরত্ব ঘোচাতে হবে। ভোলাকে মর্যাদা দিতে হবে। জাতীয় সব সুযোগ-সুবিধার ভাগীদার এই ভোলাকে করতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ভোলার মানুষ নানা রকম অসুবিধা নিয়ে চলছে। এ দ্বীপজেলা ভোলায় সবচেয়ে বড় বড় গ্যাসক্ষেত্র থাকার পরও ভোলাবাসী গ্যাস পাচ্ছে না। ভোলায় অনেক সূর্যসন্তান জন্ম নেওয়ার পরও ভোলার মানুষ এখনো বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। ভোলায় একটি ভালো হাসপাতাল নেই। ভোলার মানুষের উন্নত শিক্ষার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। প্রত্যেক জেলার আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। ভোলারও আলাদা বৈশিষ্ট্য। ভোলার মানুষের যাতায়াতের পথ আলাদা। এটাকে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা সমস্যা হিসেবে দেখেননি।’

সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নিজের দলের নেতা, নিজের দলের কর্মীকে ধর্ষণ করে লঞ্চ থেকে ফেলে দিয়েছে। ওই ছাত্রীর জন্য আমাদের যে মর্মবেদনা আছে; সেই মর্মবেদনা নেই বিএনপি–ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। তার অল্প কদিন পরেই আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। এই ভোলাকে ধর্ষকদের আস্তানা আমরা হতে দেব না। এই ভোলাকে সন্ত্রাসের আস্তানা আমরা হতে দেব না। এ ভোলাকে চাঁদাবাজদের আস্তানা আমরা হতে দেব না।’