কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের দল

কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত অভিযান। আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ সোমবার দুপুরে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের পৃথক দুটি দল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। স্বাস্থ্য বিভাগের দলের নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) খায়ের আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া দুদকের দলের নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মইনুল আহসান রওশনী।

নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলনরত ছাত্র–জনতার তোপের মুখে পড়েন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম। একপর্যায়ে তিনি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার পাঁচ সদস্যের দল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি উচ্চপর্যায়ের দল ওই কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় উভয় দলের সদস্যরা সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, আরএমও হোসেন ইমামসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। দুদক সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুঠোফোন জব্দ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেলের দিকে তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান জানানোর পর আরএমও হোসেন ইমাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ত্যাগ করার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাঁর ওপর চড়াও হন। সে সময় তিনি একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ছিলেন। আন্দোলনকারীরা তাঁকে আটকে স্লোগান দিতে থাকেন। একসময় মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেন একজন। এরপর হেলমেট পরে হোসেন ইমাম হেঁটে কার্যালয়ের ভেতরের দিকে যান। এ সময় তাঁকে লক্ষ করে একটি ডিম ছুড়ে মারতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। হোসেন ইমাম আবারও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিকেল চারটা পর্যন্ত তিনি ভেতরেই অবরুদ্ধ ছিলেন। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অস্বীকার করেছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পুলিশের সহায়তায় তিনি বাড়ি ফেরেন।

নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম। আজ সোমবার বিকেলে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি ক্যাটাগরিতে ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ১৬ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার দিন ভোরে আরএমও হোসেন ইমামের বাড়িতে ২৫–৩০ জন চাকরিপ্রার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষুব্ধ লোকজন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লেখেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সাময়িক স্থগিত করা হয়। গতকাল রোববার সকাল থেকে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্র-জনতা। পরে সিভিল সার্জনের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।

আরএমও হোসেন ইমাম বলেন, ‘আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আইনগত পদক্ষেপ নেব। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হোক।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, তাঁর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন তাঁরা। পাশাপাশি আরএমও হোসেন ইমামের সংশ্লিষ্টতাসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুদকের উপপরিচালক মইনুল আহসান রওশনী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজনের মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।