আগামী নির্বাচন হতে হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর সম্মেলনে দলের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম । শনিবার বিকেলে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে
ছবি: প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার আগে ও পরে অধিকার আদায় ও ইনসাফের জন্য অনেক রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে; কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে রক্ত দিয়েছে এ দেশের মানুষ; কিন্তু পেয়েছে পাকিস্তানিদের শোষণ। ১৯৭১ সালে আবার রক্ত দিয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে; কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও সেই লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। এমনকি স্বাধীন এ দেশেও আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য রক্ত দিতে হয়েছে বারবার। কিন্তু এই রক্তের ওপর পা রেখে যে দল যখন ক্ষমতায় গেছে, তখন সেই দলই লুটেরা, দখলবাজ, ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জাতি এগুলো আর চায় না। এবার আমরা একটি টেকসই সমাধান চাই, আমাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চাই। এ জন্য আগামী নির্বাচন হতে হবে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে।’

আজ শনিবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এ কথাগুলো বলেন। নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে এ সম্মেলন হয়। ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর সভাপতি মো. লোকমান হাকীম এতে সভাপতিত্ব করেন। মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর আরও বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, ভালো শাসনব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন শাসনপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য এবং অংশগ্রহণের বন্দোবস্ত করা। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় সেটা অসম্ভব। এ জন্য আমরা জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছি। আর জাতীয় সরকার গঠনের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন। এই পদ্ধতির মাধ্যমেই কেবল জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত করে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ভারসাম্য আনা সম্ভব। বিশেষ করে একক দলীয় আধিপত্যবাদ এবং স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে পিআর পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। এটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।’

চরমোনাই পীর রেজাউল করিম বলেন, ‘২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করে দিয়েছে, এ জাতি কোনো ফ্যাসিস্ট-খুনির খবরদারি মেনে নেয় না। এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটি সুন্দর বাংলাদেশ। এ জন্য প্রয়োজন একটি ভালো শাসনব্যবস্থা। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদকে পরোয়া করে না। এখন থেকে ভারতের সঙ্গে কথা হবে চোখে চোখ রেখে। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আমরা কখনোই মেনে নেব না, মেনে নেওয়া হবে না। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ ভারতের জঘন্য কূটকৌশলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বাংলাদেশে আবারও যদি কেউ দিল্লির দাদাদের মদদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন, তবে জাতি তাঁকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।’

২৪-এর অভ্যুত্থান হাজারো ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফসল উল্লেখ করে ফয়জুল করিম আরও বলেন, ‘বহু ছাত্র-জনতা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৪-এর অভ্যুত্থানে রাজপথে থাকা একটি দল হিসেবে বলছি, দেশের স্বার্থ ব্যতিরেকে ভবিষ্যতেও যদি কেউ ভিন্ন পথে চলেন, আমরা তাঁর বিষদাঁত উপড়ে ফেলব।’

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের বরিশাল মহানগর সভাপতি মাওলানা ওবায়দুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর সহসভাপতি সৈয়দ নাসির আহমেদ, মুহাম্মাদ জাকারিয়া হামিদী, মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান প্রমুখ।