সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এ লড়াই তিস্তা বাঁচানোর লড়াই: রাশেদ খান মেনন

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আযোজিত গণসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন রাশেদ খান মেনন। আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, তিস্তা চুক্তি, তিস্তা নদী নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লড়াই কোনো সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এই লড়াই তিস্তা নদী বাঁচানোর লড়াই, উত্তরবঙ্গকে বাঁচানোর লড়াই।

শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত গণসমাবেশের বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে চক্রান্ত করা যাবে না, হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট, তিস্তার পানি ভারত পাবে, তাতে বাধা নেই। কিন্তু এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে, খাল খনন করে পানি নিয়ে যাবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো চক্রান্ত করতে দেওয়া হবে না।’

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বব্যাংককে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের পদ্মা সেতুর ছবি উপহার দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই, পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

গণসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন হাসানুল হক ইনু
ছবি: মঈনুল ইসলাম

সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, তিস্তা চুক্তি কিংবা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো রাজনীতি-অপরাজনীতি মানা হবে না। তিস্তাবেষ্টিত মানুষের উন্নয়নে, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিস্তার জন্য বাজেটের দাবি জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা ছাড়া কোনো সমাধান হবে না। তাই তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় না থেকে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর হয়েছে। আমরা আশা করি, এই বাজেটে তিস্তার বাজেট দেবেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা দরকার। তিস্তাপারের মানুষকে বাঁচাবেন, এই আহ্বান আমাদের।’

এর আগে গণসমাবেশের উদ্বোধনের সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন করছি না, কিন্তু আমরা নিজেদের উন্নয়ন আর অধিকার আদায়ে সচেতন হয়েছি। আমাদের প্রয়োজনে আমরা আজ মাঠে নেমেছি।’

গণসমাবেশে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী। সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান ও তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

গণসমাবেশের শুরুতে তিস্তা নদীবেষ্টিত জেলা-উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীরা। এর আগে তিস্তাপারের ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও এই এলাকার মানুষের জীবন নিয়ে গণসংগীত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগে আগামী ১ জুন ৫ মিনিট ‘স্তব্ধ কর্মসূচি’ পালন করবে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।