ওরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা ছিনিয়ে নিত, অভিযানে গ্রেপ্তার ৪

পুলিশ পরিচয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া চক্রের চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। আজ দুপুরে আশুলিয়া থানায়
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাই চক্রের সদস্যরা নিজেদের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হিসেবে পরিচয় দিতেন। ছিনতাইয়ের সময় তাঁদের পরনে থাকত ডিবির পোশাকের আদলে পোশাক, ওয়াকিটকি, সিগন্যাল লাইট, বিদেশি পিস্তল। ব্যবহার করতেন প্রাইভেট কার। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীদের লক্ষ্য করে পিছু নিতেন। পরে সুযোগ বুঝে নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে ছিনিয়ে নিতেন ভুক্তভোগীর টাকা।

এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানার পুলিশ। এ সময় একজন পালিয়ে যান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ম্যাগাজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, একটি চাকু, একটি ওয়াকিটকি, একটি সিগন্যাল লাইট, দুটি ডিবি পুলিশের কোটির আদলে কোটি। আটক করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার বর্ধনগাছা দক্ষিণ পাড়া এলাকার রবিউল করিম ওরফে সুলভ (৩০), দহাকালা এলাকার মাসুদ করিম (৫০), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানার সোনাপুর এলাকার নাসির উদ্দিন ওরফে মাসুদ মিয়া (২৯) ও পাবনার চাটমোহর থানার চাটমোহর কাজীপাড়া এলাকার আবদুল খালেক (৩৪)।

আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আশুলিয়া থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আবদুল্লাহিল কাফী। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোমিনুল হক, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জামাল শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে আশুলিয়ায় উত্তরা এইআরই ইপিজেড শাখা থেকে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা তোলেন মেসার্স সানি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ইউসুব আকন। ব্যাংক থেকে বের হয়ে হেঁটে কিছু দূর যাওয়ার পর একটি প্রাইভেট কার থেকে ডিবির পোশাকের আদলে পোশাক পরা পাঁচজন নেমে ইউসুবের গতি রোধ করেন। তাঁরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ইউসুবের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে প্রাইভেট কার নিয়ে সটকে পড়েন। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। আশুলিয়া থানা-পুলিশের একটি দল বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয়।

পরে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশের একাধিক দল অভিযান শুরু করে। বিকেল চারটার দিকে বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর সড়কের আশুলিয়া বাজার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্রাইভেট কারটি পুলিশ আটক করে। গাড়ি থেকে মাসুদ করিম (৫০), মো. নাসির উদ্দিন ওরফে মাসুদ মিয়া, রবিউল করিম ওরফে সুলভ, আবদুল খালেককে আটক করা হয়। এ সময় কৌশলে মো. রুবেল পালিয়ে যান। আটক ব্যক্তিদের থানায় এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন দাবি পুলিশের।

পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় এ চক্রের একাধিক ঘটনার খবর আমরা পেয়েছি। চক্রটি ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিত। সাভার-আশুলিয়াতে চক্রটি সক্রিয় ছিল। আমরা এ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়া এ চক্রের অন্যদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু হয়েছে। মূলত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই প্রসঙ্গে আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। কাউকে মারধর বা টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এ বাহিনীর কাজ নয়। কেউ যদি এমনটি করে, তাহলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাঁরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গতকালের ঘটনায় ভুক্তভোগী ইউসুব আকন এবং পুলিশ বাদী হয়ে দুটি পৃথক মামলা করেছে।