দুই মাস পরও শেষ হয়নি সিলেটের কিনব্রিজের মেরামতকাজ, বাড়ল ভোগান্তি

নির্ধারিত দুই মাসেও শেষ হয়নি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কারকাজ। ফলে এ পথে যাতায়াতকারীরা নৌকায় করে নদী পার হচ্ছেন। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের কিনব্রিজ মেরামতকাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করার ঘোষণা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দুই মাস শেষ হলেও মেরামত ও সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ। এখন ওই বিভাগ বলছে, কিনব্রিজের মেরামতকাজের জন্য আরও দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ও পথচারীদের জন্য কিনব্রিজ বন্ধ থাকার কথা রয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়ে মেরামতকাজ শেষ না হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেল। মেরামতকাজ চলায় দুই পাশের বাসিন্দা ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে লোকজনকে। আবার অনেকে সেতুর নিচে নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। গত ১৬ আগস্ট সিলেটের কিনব্রিজে মেরামত, নবায়নসহ নির্মাণকাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস যানবাহন ও মানুষজন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর পথচারীদের চলাচল বন্ধ করতে সেতুটির দুই পাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়।

রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ করার দুই মাস শেষ হয়েছে রোববার। দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, প্রতিদিনই তিনি দক্ষিণ সুরমা থেকে দুই থেকে তিন দফা সুরমা নদী পার হয়ে নগরের উত্তর পাশে যাতায়াত করেন। ব্রিজ মেরামত হওয়ার প্রথম দিকে ঘুরে অন্য ব্রিজ দিয়ে নগরে প্রবেশ করতেন। এতে ব্যয় হতো দৈনিক ১০০ টাকার মতো। ব্রিজটি ঠিক থাকলে এত টাকা ব্যয় করতে হতো না। হেঁটেই চলাচল করতে পারতেন।

কিনব্রিজের তদারককারী প্রতিষ্ঠান সিলেট সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। আর সংস্কারকাজ করছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ। সওজ সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সিলেটের সওজ। একই বছরের জুন মাসে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় সংস্কারকাজ হচ্ছিল না।

পথচারীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে যাতায়াতের সহজ পথ কিনব্রিজ। ব্রিজটি বন্ধ থাকায় পথচারীদের ঘুরে অন্য পথে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা দুই–ই অপচয় হচ্ছে। ভোগান্তিও বাড়ছে তাঁদের।

সেতুটি মেরামতের কাজ পেয়েছে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মো. শিপন বলেন, কিনব্রিজের মেরামতকাজ চলমান। দুই মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সেতুর দুই পাশের পাত অকেজো অবস্থা পাওয়া গেছে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। সেতুটি দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে আরও শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ করানো হচ্ছে। সোমবারও ব্রিজটির মেরামতকাজে নিয়োজিত ছিলেন ৪৫ জন শ্রমিক।

এ ব্যাপারে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীষাণ দত্তের মুঠোফোনে কল করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রেলওয়ে সেতু বিভাগের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই আরও দেড় মাসের জন্য ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন ও পথচারী চলাচল বন্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্রিজটি বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। সেতুটির দুই পাশে লাগানো পাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো মেরামত করতে সময় বেশি লাগছে। তবে ৩০ নভেম্বরের আগেই পথচারীদের জন্য কিনব্রিজ খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ব্রিজের ওপর কার্পেটিংয়ের পর সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দিতে হয়েছিল। সিলেট নগরের উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। দুই অংশকে সংযুক্ত করতে নদীর ওপর ১৯৩৬ সালে ধনুকের মতো বাঁকা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের লোহার তৈরি এই সেতুর নাম কিনব্রিজ। এটি এখন দেশ-বিদেশে সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে যানবাহনের ভার বহন করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কয়েক বছর আগে এখান দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সেতু দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করে আসছিল।