কারাগারে হত্যা মামলার আসামির ছবি তুলে স্বজনদের কাছে প্রেরণ, বরখাস্ত কারারক্ষী
কুমিল্লা কারাগারে হত্যা মামলার এক আসামির ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠানোর অভিযোগে এক কারারক্ষীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, কারা আইন ভঙ্গ করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ওই কারারক্ষীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বরখাস্ত ওই কারারক্ষীর নাম ইসমাইল হোসেন তুহিন। তাঁর বাড়ি বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় চাপাতলী গ্রামে। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া তুহিন ২০২২ সালে কুমিল্লা কারাগারে বদলি হয়ে আসেন।
এদিকে কারাগারে তোলা হত্যা মামলার ওই আসামির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই আসামির স্বজনেরা ডিজে গান যুক্ত করে ওই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। হত্যা মামলাটির বাদীপক্ষের অভিযোগ, তাঁদের ভয় দেখানোর জন্য এবং ক্ষমতা প্রকাশ করতেই এ কাজ করেছেন আসামির স্বজনেরা।
কারা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ দুপুর শহরতলির শাসনগাছায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় নিহত হন শাসনগাছা এলাকার জামিল হাসান অর্ণব (২৬)। নিহত অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজর স্নাতক (পাস) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত অর্ণবের মা ঝর্ণা আক্তার। এতে ফজলে রাব্বীকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে।
গত ১৫ মার্চ দুপুর কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছায় গুলিবিদ্ধ হয় নিহত হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজর শিক্ষার্থী জামিল হাসান অর্ণব (২৬)। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফজলে রাব্বী (৩০) কুমিল্লা কারাগারে আছেন। তাঁর ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন কারারক্ষী ইসমাইল হোসেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরদিন প্রধান আসামি ফজলে রাব্বীকে (৩০) ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে গুলিভর্তি পিস্তলসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। অন্যরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও কারাগারে রয়ে যান প্রধান আসামি ফজলে রাব্বী।
ঈদের আগের দিন ১৬ জুন কারারক্ষী ইসমাইল হোসেন জেলারের বাসভবনের ছাদে দায়িত্ব পালনকালে মুঠোফোনে আসামি ফজলে রাব্বীর কয়েকটি ছবি পাঠান তাঁর স্বজনদের কাছে। পরে ওই ছবি ও ভিডিও আসামি রাব্বীর ভাই এ কে আল আমিন খানের আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। এই ছবির সঙ্গে ডিজে গান জুড়ে দিয়ে সঙ্গে লেখা হয়, ‘ভাই সময় আসবে ইনশা আল্লাহ। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নিহত অর্ণবের পরিবার।’
অর্ণবের বাবা আজহার উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে একবার আদালতে দাঁড়ানো ফজলে রাব্বীর ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। পরে আবার জেলখানার ছবি ফেসবুকে দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো হয়েছে। এখন আমরা ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কিত।’
এদিকে অর্ণবের বাবা আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, ফেসবুকে হত্যা মামলার আসামির ছবি পোস্ট করার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। অর্ণবের বাবা মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে কারাগার থেকে আসামির ছবি বাইরে এনে সেটা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানোয় কারা অভ্যন্তরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা আছে। এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।’ কারা অভ্যন্তরে মুঠোফোন ব্যবহার করা যায় কি না, এমন প্রশ্নে কারা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কারা অভ্যন্তরে কারও ফোন ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সে হয়তো লুকিয়ে এমন কাজ করেছে।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান জানান, গতকাল তিনি কারাগার পরিদর্শন করেছেন। পুরো ঘটনা শুনেছেন। অভিযুক্ত কারারক্ষীকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।