কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর যুবজোটের হামলা, আহত ৩

ভেড়ামারায় হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতা–কর্মীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা একটায় হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতা-কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

মন্দির পরিচালনাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে শোভনের বিরুদ্ধে এ হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেছে পুলিশ। তবে আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক (৩৭), স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী বেলাল হোসেন ওরফে রিপন (৩৬) ও শ্যামল আলী (৩৫)। সঞ্জয়ের মাথায় একাধিক কোপ ও পায়ে ছররা গুলির চিহ্ন আছে। বেলালের মাথায় আঘাত ও শ্যামলের হাতে কোপ লেগেছে। তাঁদের তিনজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পায়ে ছররা গুলি লেগেছে। এক্স-রে করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তাঁদের হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্যামল আলী প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১১টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন সঞ্জয়কে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। খাদ্যগুদাম মোড়ের বাড়িতে পৌঁছানোর আগে সেখানে ওত পেতে থাকা ৩০ থেকে ৩৫ জন হঠাৎ বেরিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। প্রত্যেকের হাতে রামদাসহ দেশি অস্ত্র ছিল।

মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হামলা হয়। তিনি গুলিও ছোড়েন। এতে তাঁরা তিনজন আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের প্রথমে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

হাসপাতালে রোগী ভর্তি ফরম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয়ের রোগ বৃত্তান্তের কাগজে ‘মাল্টিপল গানশুট অ্যাট লেগ’ লেখা আছে। যদিও পুলিশ গোলাগুলির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক বলেন, এলাকায় মন্দির পরিচালনা কমিটির বিষয় নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ আছে। এ জন্য গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছেন।

পুলিশের হেফাজতে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে যুবজোটের নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ভেড়ামারার বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীমের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। দৌলতপুরের বাসিন্দা ও জাতীয় যুবজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবিরকে ফোন করলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এদিকে আজ দুপুর ১২টার দিকে ভেড়ামারা শহরে দোকানপাট বন্ধ করে কুষ্টিয়া-দৌলতপুর সড়ক অবরোধ করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী তিনটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে সেখানে ভেড়ামারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি হ্যান্ডমাইকে জাসদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। জাসদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিচ্ছি।’ পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যে অস্ত্রের গুলি আমার সন্তানের গায়ে লেগেছে, সূর্য ডোবার আগে যদি অস্ত্রধারীর কাছ থেকে তা বের না হয়, তাহলে সূর্য ডোবার পরে পরিণতি খুবই ভয়ংকর ও ভয়াবহ হবে।’

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, মন্দিরে পূজার সময় মেলা হয়। সেই মেলা নিয়ে বিরোধ। রাতে মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে সত্য, তবে গোলাগুলির বিষয়টি সত্য নয়। রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এটা অনেকেই ছড়াচ্ছেন। এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে। থানায় মামলা হচ্ছে। এ ঘটনায় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।