৩২ রকমের মসলার নেহারি খেতে শীতলক্ষ্যার পাড়ে ভোজনরসিকদের ভিড়

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকার ঐতিহ্যবাহী গরুর পায়ার নেহারি। মজাদার স্বাদের এই নেহারি খেতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে শীতলক্ষ্যার পাড়ে
ছবি: প্রথম আলো

বাজার থেকে গরুর পায়া সংগ্রহের পর ভালোভাবে পরিষ্কার করে সেদ্ধ করতে হয়। এরপর দারুচিনি-এলাচিসহ ৩২ ধরনের মসলা মিশিয়ে শুরু হয় রান্নার প্রক্রিয়া। টানা তিন-চার ঘণ্টা চুলায় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় গরুর পায়ার নেহারি। মজাদার স্বাদের এই নেহারি খেতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকেরা। প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পূর্ব পাড়ে ফরাজীকান্দা এলাকায় ভোজনরসিকেরা ভিড় করেন।

প্রায় আড়াই যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকায় গরুর পায়ার নেহারি বিক্রি হয়। সেখানকার গরুর পায়ার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। একটি গরুর পায়া থেকে চারটি নলা পাওয়া যায়। একেকটি নলা ১৫০ থেকে ২০০, হালিম ৬০ থেকে ১০০, রুটি ১৫ থেকে ৩০, চিকেন চাপ ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। মজাদার স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে নেহারি খেতে নারায়ণগঞ্জ শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের আনাগোনা থাকে শীতলক্ষ্যার পাড়ে।

২৮ বছর আগে বন্দরের ফরাজীকান্দা এলাকায় প্রথমে গরুর পায়া বিক্রির একটি দোকান দেন ষাটোর্ধ্ব ইসমাইল হোসেন। এরপর তাঁর দেখাদেখি অনেকে দোকান ও রেস্তোরাঁ চালু করেন। ইসমাইলের ছেলে জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা প্রথমে ফরাজীকান্দা এলাকায় নেহারি বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে ফরাজীকান্দার নেহারির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, অগ্রিম টাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোরে কসাইয়ের দোকান থেকে গরুর পায়া সংগ্রহ করতে হয়। পরে নানা প্রক্রিয়া শেষে নেহারি খাওয়ার উপযোগী হয়। পুষ্টিগুণ ও স্বাদের কারণে প্রচুর মানুষ নেহারি খেতে সেখানে ভিড় করেন।

শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার দ্বিগু বাবুর বাজারসহ বিভিন্ন কসাইয়ের দোকান থেকে গরুর পায়া সংগ্রহ করেন রেস্তোরাঁর মালিকেরা। সেই পায়া কিনে ভালোভাবে কেটে পরিষ্কার করা হয়। একটি গরুর চারটি পায়া থেকে ১৬টি নলা পাওয়া যায়। সেগুলো ভালোভাবে সেদ্ধ করে দারুচিনি-এলাচিসহ ৩২ ধরনের মসলা মিশিয়ে হালিমের সঙ্গে রান্না করা হয়। টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা রান্নার পর খাওয়ার উপযোগী হয় নেহারি। প্রতিদিন একেকটি দোকানে ১২ থেকে ১৫টি গরুর পায়ার নলা বিক্রি হয়। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকে।

দারুচিনি-এলাচিসহ ৩২ ধরনের মসলা মিশিয়ে হালিমের সঙ্গে রান্না করা হয়। টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা রান্নার পর খাওয়ার উপযোগী হয় নেহারি
ছবি: প্রথম আলো

ষাটোর্ধ্ব ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গরুর পায়া রান্নায় মসলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি-এলাচিসহ ৩২ ধরনের মসলা একসঙ্গে ভেঙে সেই মসলা দিয়ে পায়া রান্না করেন তিনি। পায়া যত বেশি জ্বাল দেওয়া হবে, তত বেশি মজা।

ফরাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, হালিমের সঙ্গে গরুর পায়া রান্না করায় খেতে দারুণ। গরুর নেহারির রগ ও অস্থিমজ্জা খেতে অসাধারণ। যেটি অন্য খাবারে পাওয়া যায় না। রুটি দিয়ে নলা খাওয়ার স্বাদই আলাদা।

নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফ হোসেন গরুর পায়া খেতে ফরাজীকান্দা এলাকায় এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গরুর পায়া খুবই মজাদার ও সুস্বাদু। তাঁর মতো অনেকে ফরাজীকান্দায় গরুর পায়া খেতে ভিড় করেন।

বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর থেকে নেহারি খেতে আসা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘পছন্দের কারণেই দূর থেকে এখানে নলা খেতে এসেছি। অনেকেই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে ঘুরতে এসেও নেহারি খান।’

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকার ঐতিহ্যবাহী গরুর পায়ার নেহারি
ছবি: প্রথম আলো

ফরাজীকান্দা এলাকার প্যারেন্টস হালিম অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউসেও গরুর পায়া বিক্রি হয়। প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি গরুর নলা বিক্রি করেন রেস্তোরাঁর মালিক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ফরাজীকান্দার গরুর পায়ার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সেখানকার গরুর পায়ার স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই দূরদূরান্তের লোকজন সেখানে ভিড় করেন। নেহারি খেতে আসা লোকজনের কারণে এলাকাটি জমজমাট হয়ে উঠেছে।