কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে ঢিলেমি

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায় মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সম্প্রতি তোলা ছবিছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। প্রত্নসম্পদে ভরপুর লালমাই পাহাড়ের কোলে দৃষ্টিনন্দন এলাকা নিয়ে নতুন এই ক্যাম্পাস হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১১ মার্চ ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ব্যাটালিয়ন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

চুক্তি মোতাবেক ২০২১ সালের নভেম্বরে সেনাবাহিনী ভূমি উন্নয়ন ও ভৌত কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ওই কাজ শেষ হবে না। কাজের গতি কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নিয়ে শীর্ষ ব্যক্তিদের নজরদারিও কম। অবশ্য উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হবে।’

সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের লালমাই মৌজার রাজারখলা এলাকার পাহাড়ি ও সমতলের ২০০ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় সেখানকার ১০০ একর জমির উন্নয়ন, ১০ তলাবিশিষ্ট ৪টি একাডেমিক ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন, ১০ তলা করে ২টি ছাত্র ও ২টি ছাত্রী হল, উপাচার্যের বাসভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষকদের একটি আবাসিক ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ডরমিটরি ভবন, একটি ১০ তলাবিশিষ্ট কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, ১টি ৬ তলাবিশিষ্ট স্কুল ভবন, ১টি ৫ তলাবিশিষ্ট ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), ৩ তলাবিশিষ্ট ১ হাজার আসনের ১টি মিলনায়তন, ৬ তলাবিশিষ্ট ১টি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র, ১টি ৩ তলাবিশিষ্ট মেডিকেল ও ডে কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, স্মৃতিস্তম্ভ, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও লেক খননের কাজ চলছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজারখলা এলাকায় পাহাড় ও টিলা কেটে নতুন স্থাপনা হচ্ছে। সেখানে ভবন নির্মাণ চলছে। ইতিমধ্যে উপাচার্যের বাংলো হয়েছে। বিভিন্ন ভবনের কোনোটি চারতলা, কোনোটি একতলা, কোনোটি দোতলা—এ রকম করে কাজ চলছে। কোথাও সড়ক করা হচ্ছে, কোথাও মসজিদের কাজ চলছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে। এ ছাড়া প্রকল্পের ভেতরে ৫ দাগে থাকা বন বিভাগের ৪ দশমিক ৭০ একর জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত চারজন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন এই কাজে। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক এস এম শহিদুল হাসান বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ইউজিসিতে। সেখানে এটির সংশোধন চলছে।