মুন্সিগঞ্জে গ্রাম্য সালিসে সংঘর্ষ, ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু

মুন্সিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় গ্রাম্য সালিসে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে এক মা মারা গেছেন বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। জমির সীমানা–সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ওই সালিসের আহ্বান করা হয়েছিল।

আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ওই মায়ের নাম রোকেয়া বেগম (৬৫)। তিনি গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের মৃত এবাদুল্লাহ সরকারের স্ত্রী।

এলাকাবাসী ও মৃত নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির সীমানা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের সোহেল সরকারের সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই সজীব, মঞ্জু ও রাজীবদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিরোধ মেটাতে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে পৈক্ষারপাড় গ্রামে তাঁদের বাড়িতে গ্রাম্য সালিসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আজ বেলা দুইটার দিকে সালিস শুরু হয়। সালিসের রায়ে বিরোধপূর্ণ জমি সোহেল সরকার পান। কিন্তু ওই জমিতে সজীবদের একটি খড়ের গাদা ছিল। ওই খড়ের গাদা সরানো নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে রোকেয়া বেগম ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিকেল পৌনে চারটার দিকে ওই নারীকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তাঁর শরীরে বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন পাননি বলে তিনি জানান।

রোকেয়ার ছেলে সোহেল সরকার বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সজীব, মঞ্জু ও রাজীব মূলত আমাকে মারধর করছিল। আমার মা আমাকে বাঁচাতে এলে তাঁকে কিল-ঘুষি মারে। তারা আমার মাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’

ঘটনার পর অভিযুক্ত সজীব, মঞ্জু ও রাজীব এলাকাছাড়া। তাঁদের মধ্যে একজনের একটি মুঠোফোন নম্বর পাওয়া গেলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-গজারিয়া সার্কেল) থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, গ্রাম্য সালিসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে এক নারী মারা গেছেন বলে শুনেছেন। লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ভেতরে আঘাত আছে কি না সেটি জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পরে বিস্তারিত বলা যাবে। পরিবার মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেবে।