শরীয়তপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

শরীয়তপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ওয়াহিদুজ্জামানের স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ওয়াহিদুজ্জামান খান (৩২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার চিকন্দি ইউপির আবুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ঘটনায় আরও ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

চিকন্দি ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমাছ খানের ও সাবেক সদস্য তমিজ খানের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। নিহত ওয়াহিদুজ্জামান সাবেক ইউপি সদস্য তমিজ খানের ভাতিজা ও মাদারীপুর বঙ্গবন্ধু ল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুই পক্ষই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার চিকন্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলমাছ ও তমিজ খানের পক্ষের মধ্যে বিরোধ আছে। তমিজ খানের পক্ষে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাচ্চু সরদার এবং আলমাছ খানের পক্ষে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন খান ও তাঁর ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান। বিভিন্ন সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি সভায় আলমাছ খানের লোকজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাচ্চু সরদারকে লাঞ্ছিত করে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এলাকাবাসী জানান, ওই ঘটনার জেরে আজ দুপুরে চিকন্দি বাজারে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। তমিজ খানের ভাতিজা মোদাচ্ছের খানকে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আলমাছ খানের সমর্থকেরা ধাওয়া দেন। খবর পেয়ে মোদাচ্ছেরের ছোট ভাই ওয়াহিদুজ্জামান লোকজন নিয়ে ছুটে আসেন। তখন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১১ ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ওয়াহিদুজ্জামান মারা যান। অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় মিন্টু মাতবর (৪২) ও দিদার সিকদারকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ওয়াহিদুজ্জামান খান
ছবি: সংগৃহীত

ওয়াহিদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেলে সদর হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর স্বজনেরা। হাসপাতালের মেঝেতে বসে দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে আহাজারি করছিলেন ওয়াহিদুজ্জামানের স্ত্রী সুমি আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্থানীয় রাজনীতি করেন। কিন্তু আমার স্বামী পড়ালেখার পাশাপাশি বালুর ব্যবসা করতেন। তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে শুনে বাড়ি থেকে ছুটে যান। আলমাছ খান ও আক্তার খানের লোকজন তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।’

চিকন্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাচ্চু সরদার বলেন, আলমাছ, ‘আক্তার ও তাঁর ভাই ফরহাদ খান এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করতে চান। তাঁরা আমাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছেন। আজ তাঁদের সমর্থকেরা ওয়াহিদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।’ তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। রাজনীতি করলেও এলাকার মারামারির ঘটনায় আমি জড়িত নই।’

সংঘর্ষের বিষয়ে চিকন্দি ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমাছ খান ও সাবেক সদস্য তমিজ খানকে ফোন করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।

সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।