স্বামী হলেন দ্বিতীয়, স্ত্রী হারালেন জামানত

ফরিদপুর জেলার মানচিত্র

তৃতীয় ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপসমাজসেবা-বিষয়ক সম্পাদক মোখলেসুর রহমান (ঘোড়া)। তাঁর (মোখলেসুর রহমান) স্ত্রী লোপা রহমানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, মোখলেসুর রহমান (ঘোড়া) ৫১ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। অপর দিকে তাঁর স্ত্রী লোপা রহমান (আনারস) ১০১টি ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন। তিনি জামানতও হারাচ্ছেন। এই উপজেলায় ৬২ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী কাওসার ভূঁইয়া।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মোখলেসুর রহমান (৩৯) ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ঈশ্বরদী গ্রামের বাসিন্দা। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ এই প্রার্থী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। অপর দিকে তাঁর স্ত্রী লোপা রহমান (৩৪) একজন গৃহিণী।

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত লোপা তাঁর নির্বাচনী প্রতীক আনারস বাদ দিয়ে স্বামীর ঘোড়া মার্কায় ভোট চেয়েছেন। ডামি প্রার্থী হিসেবে স্বামী মোখলেসুর তাঁকে দাঁড় করিয়েছিলেন। এ জন্য লোপার জামানত হারানোর খবরে তাঁরা তেমন অবাক হননি। তাঁরা আগে থেকেই বুঝতে পারছিলেন কাওসার ভূঁইয়া আর মোখলেসুর রহমানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ, কাওসার ছিলেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সনের সমর্থিত প্রার্থী। আর মোখলেসুরকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ সমর্থন দিয়েছিলেন।

ফলাফল ঘোষণার পর থেকে মোখলেসুর রহমান ও স্ত্রী লোপা রহমানের ফোন বন্ধ। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে স্ত্রীকে ডামি হিসেবে দাঁড় করানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মোখলেসুর আগে বলেছিলেন, ‘আমার সমর্থকদের নিয়ে আমি প্রচারণা চালাচ্ছি। আমার স্ত্রীও তাঁর সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুজ্জামান বলেন, ‘আসলে মোখলেসুরের স্ত্রী লোপা রহমান খুব একটা ভোট পাবেন না, তা আমরা নির্বাচনে আগেই ধারণা করেছিলাম। আমাদের টার্গেট ছিল মোকলেসুর। আমরা তাঁকেই সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে।...আর স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে একই পদে নির্বাচন করায় জনগণের কাছে কোনো মিস ম্যাসেজ (ভুল বার্তা) যায়নি।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে রোপা রহমান ছাড়াও আরও দুজন প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। তাঁরা হলেন মো. সহিদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল)। তিনি পেয়েছেন ৪৯৬ ভোট। অপরজন হলেন মাইনুল ইসলাম খান (কই মাছ) তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৫৯৩ ভোট।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক খান বলেন, ভাঙ্গায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ পরিবেশের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে মোখলেসুরের স্ত্রী লোপাসহ তিনজন নির্ধারিত ভোট না পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন। ভাঙ্গায় ভোট প্রদানের হার ৫০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।