‘১০ লাখ টাকা খরচ করার পরও প্রার্থী হতে পারছিনে’

মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম। বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা রিটার্নিং কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে দুই বছর ধরে প্রচার ও জনসেবামূলক কাজ করে আসছিলেন বলে দাবি জাহাঙ্গীর আলমের। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংসদীয় এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নিরাপত্তা জামানতের টাকাও তিনি ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে জানলেন, সময় শেষ। মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহাঙ্গীর।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বেরিয়ে জাহাঙ্গীর আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার একটা অংশ আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি এত কষ্ট করে ব্যাংকের টাকা, উকিলের টাকা, করের টাকা, জনগণের জন্য লিফলেট-ব্যানার করেছি। ১০ লাখ টাকা খরচ করার পরও প্রার্থী হতে পারছিনে। আমার জীবনডা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। ডিসি স্যার যদি কাগজটা নিত, বিবেচনা কইরতো তাহলি সন্তোষ্ট হতাম।’

চুয়াডাঙ্গা-২ (সদরের একাংশ, দামুড়হুদা ও জীবননগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন দামুড়হুদার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। এ জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র জমা দিতে চাইলে তা আর জামা নেওয়া হয়নি।

জাহাঙ্গীর আলম গ্রামে গবাদিপশুর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরে আসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতেই বিকেল চারটা পেরিয়ে যায়। বেলা সাড়ে চারটায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তিনি তা জমা নেননি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা এসেছেন, সবার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়নি।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মামাতো-ফুফাতো ভাই এবং এক কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। তিনি একাই তিন হাজার লোকের কাছে গেছেন। দুই বছর জনসেবামূলক কাজ করেছেন। কাগজপত্র ফটোকপি করতে আধা ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। এই দেরির কারণে তিনি আর মনোনয়নপাত্র জমা দিতে পারেননি।

একপর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যদি বেঁচে থাকি, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে। আগামীবার আমি নির্বাচনে আসব। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে আমি এই ধকল সহ্য করতে পারি।’