নাবি জাতের আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

নাবি জাতের আম কম চাষ হওয়ায় এবং মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই নতুন এ জাতের আমবাগান গড়ে উঠছে জেলায়।

মৌসুমের শেষ দিকে জমজমাট নওগাঁর সাপাহার আমবাজার। এখন বাজারে উঠছে নাবি জাতের আম বারি-৪ ও আশ্বিনা। গত রোববার।
ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁয় আমের গতানুগতিক জাতগুলোর পাশাপাশি উন্নত নাবি (বিলম্ব) জাতের আম আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। নাবি জাতের আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে নাবি জাতের আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে জেলায়।

আমচাষিরা বলেন, দেশে সাধারণত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলি, হাঁড়িভাঙা, নাক ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। বেশির ভাগ আমের জোগান যখন শেষ হয়, তখনই পাকতে শুরু করে বারি আম-৪, বারি আম-১২ (গৌড়মতি) ও আশ্বিনা জাতের আম। নাবি জাতের আম কম চাষ হওয়ায় এবং মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় ভালো দামে বিক্রি হয়।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বল্প সময়ে ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়া যায়, এমন জাতের নতুন নতুন আমবাগান গড়ে উঠছে জেলায়। জেলায় চলতি বছর ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম্রপালি জাতের আমের চাষ হয়েছে।

নতুন করে চাষ হওয়া আমবাগানের অধিকাংশই নাবি জাতের আম। নাবি জাতের আমের মধ্যে চলতি বছর জেলায় আশ্বিনা আমের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। বারি আম-৪ চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে ৫৯২ হেক্টর বেড়ে এবার জেলায় গৌড়মতি আমের চাষ হয়েছে ৯৪৮ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বারোমাসি জাতের মধ্যে কাটিমন চাষ হয়েছে ১১০ হেক্টর ও বারি আম-১১ চাষ হয়েছে ৫৫ হেক্টর জমিতে।

আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্তমানে জেলায় পাওয়া যাচ্ছে নাবি জাতের বারি আম-৪। বাজারে প্রতি মণ বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। জেলার খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। বারি আম-৪ মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যাবে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যাবে নাবি জাতের আরেক আম আশ্বিনা। এরপরে বাজারে আসবে নাবি জাতের বারি আম-১২ বা গৌড়মতি।

সাপাহার উপজেলার ফুটকইল এলাকায় ৯০ বিঘার একটি আমবাগান রয়েছে সাখাওয়াত হোসেনের। এ বাগানে নাবি জাতের বারি আম-৪-এর ১ হাজার ৩০০টি ও ১ হাজার ৭০০টি গৌড়মতি জাতের আমের গাছ রয়েছে। এবারই প্রথম বারি আম-৪ ও গৌড়মতি আম ধরেছে তাঁর বাগানে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে তাঁর ৯টি বাগান রয়েছে। এসব বাগানের প্রায় ৮০ শতাংশ গাছই আম্রপালি। এবার প্রতি মণ আম্রপালি ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতি মণ বারি আম-৪ বিক্রি করছেন ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়। আম্রপালির চেয়ে বারি আম-৪ চাষে দ্বিগুণ লাভ। গৌড়মতি আরও দেরিতে বাজারে আসবে।

সাপাহারের গোডাউন পাড়া এলাকার আমচাষি সোহেল রানাও চাষ করেছেন নাবি জাতের বারি আম-৪, গৌড়মতি ও আশ্বিনা আম। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে প্রতি কেজি আম্রপালি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। অথচ মৌসুমের শেষে নাবি জাতের বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে। তাঁর বাগান দেখে অনেকেই বারি আম-৪ ও গৌড়মতির চারা ও কলম কিনছেন।

জেলার কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এ কে এম মঞ্জুরে মাওলা বলেন, বারি আম-৪ ও বারি আম-১২ (গৌড়মতি) উন্নত জাতের হাইব্রিড আম। এ দুটি জাতই নওগাঁয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।