‘উপকরণে সমস্যা’, যশোরে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলেন এলাকাবাসী

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইছামতী খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডারের ঢালাইয়ের কাজ চলছে। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ইছামতী খালের ওপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি নতুন সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই সেতুর গার্ডারের ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। মাটি মিশ্রিত পাথর ও লাল বালুর সঙ্গে খালের লোনা পানি দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা ঢালাই কাজ বন্ধ থাকে। পরে ভালো উপকরণ দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার ইছামতি এলাকার ইছামতি খালের ওপর ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৩ দশমিক ৬৬ মিটার প্রস্থের একটি সেতু ছিল। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এলজিইডির গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সেখানে ৬০ দশমিক শূন্য ৫ মিটার দীর্ঘ ও ৫ দশমিক ১৮ মিটার প্রস্থের একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৮২ টাকা। মাদারীপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্স সেতুটি নির্মাণকাজ করছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৮ জুন তা শেষ হওয়ার কথা।

সকালে ইছামতী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে ইছামতী খাল। খালের ওপর আড়াআড়িভাবে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটি পুরোনো সেতু ছিল। সেই সেতুটি ভেঙে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর উত্তর পাশে ছোট একটি বাজার। বাজারের পাশে ২০–২৫ জন শ্রমিক পাথর, বালু, সিমেন্ট ও পানি মিশ্রণযন্ত্রের মাধ্যমে মিশিয়ে সেতুর গার্ডারের ঢালাই কাজ করছেন। সেতুটির গার্ডারের নিচের অংশে কাঠের তক্তা দিয়ে শাটারিং করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, আজ সকালে সেতুর গার্ডারের ঢালাই করার কথা ছিল। সকাল নয়টায় তাঁরা দেখেন, শ্রমিকেরা মাটি মিশ্রিত পাথর ও লাল বালু মিশ্রণযন্ত্রে দিচ্ছেন। এরপর সিমেন্ট দিচ্ছেন। পরে বিদ্যুৎ–চালিত মোটর ও ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে খালের লোনাপানি দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করছেন। এ অবস্থা দেখে তাঁরা কাজে বাধা দেন। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ও একজন প্রকৌশলী কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিক্ষোভ করলে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাথর ধুয়ে, বালু পরিষ্কার করে ও পাশের নলকূপ থেকে ভালো পানি এনে মিশ্রণযন্ত্রে দিয়ে এক ঘণ্টা পর সাড়ে ১০টার দিকে গার্ডারের ঢালাই কাজ আবার শুরু করা হয়।

মাটি মিশ্রিত পাথর ও লাল বালুর সঙ্গে খালের লোনা পানি দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করায় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকে। মঙ্গলবার সকালে অভয়নগর উপজেলার ইছামতী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দা জসীম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটির কাজ ভালো হচ্ছে না। গার্ডারের নিচের অংশে কাঠের তক্তা দিয়ে শাটারিং করা হয়েছে। গার্ডারের স্টিলের পাইপের সঙ্গে গাছের বল্লি দেওয়া হয়েছে। সকালে মাটি মিশ্রিত পাথর, বালু ও খালের লোনাপানি দিয়ে ঢালাই করা হচ্ছিল। এলাকাবাসী জড়ো হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এক ঘণ্টা পর পাথর ও বালু পরিষ্কার করে নলকূপ থেকে পানি তুলে পুনরায় কাজ শুরু হয়।

শ্যামনগর গ্রামের মো. সোহেল বলেন, ‘পাথরের ভেতর মাটি, বালুর ভেতর মাটি এবং খালের লোনাপানি দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে ভালো উপকরণ দিয়ে ঢালাই করা হয়।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহিন খান বলেন, সকালে ঢালাইয়ের কাজে একটু সমস্যা হয়েছিল। পরে বিষয়টি ঠিক করে দেওয়া হয়। গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির পরামর্শক শাহানুর আলী বলেন, ‘চুক্তিপত্র অনুযায়ী স্টিলের শাটারিংয়ের পাশাপাশি কাঠের শাটারিং দিয়ে কাজ করা যাবে। তাঁরা ঠিকমতো কাজটি তদারকি করছেন। সকালে গার্ডারের ঢালাই দেওয়ার সময় এলাকাবাসী বাধা দিলে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। পরে পাথর ভালো করে ধুয়ে, বালু পরিষ্কার করে এবং নলকূপের পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে কাজ শুরু করা হয়।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি প্রথম আলোকে বলেন, গার্ডার ঢালাইয়ের সময় সমস্যা দেখা দেওয়ায় কিছু সময়ের জন্য কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে ঠিকমতো গার্ডারের ঢালাই দেওয়া হয়েছে।