মধুপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মধুপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।  এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়িসহ অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পৃথক সমাবেশ আয়োজনকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিত অংশ যৌথভাবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এদিকে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান থানা মোড়ের দক্ষিণে পৃথকভাবে কর্মসূচির আয়োজন করে। এ সভায় যোগদান করতে আসা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা পথে বিভিন্ন স্থানে মারধরের শিকার হন। এ ঘটনাকে ঘিরে মধুপুরে উত্তেজনা দেখা দেয়।

সমাবেশে আসার পথে হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লাউফুলা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান (৩২), দামপাড়া গ্রামের মোর্শেদের ছেলে মাসরাফি (২৩), ইদিলপুর গ্রামের আহমেদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৬০), ভবানটেকী গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে সোয়াইফ (২০), গাংগাইর গ্রামের খালেদ আহমেদের ছেলে মাসরুর আহমেদ (৩০), দানবাবান্দা গ্রামের আহসান আলীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬৫)।

আহত ব্যক্তিদের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ইসমাইল হোসেনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসাধীন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, আলোকদিয়া ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাযোগে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের সমাবেশে আসার সময় থানা মোড়ে কতিপয় ছাত্র ও শ্রমিকনেতা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁর কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা। হামলাকারী সবাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খানের নেতৃত্বাধীন কর্মী বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ ঘটনার পর মধুপুর পৌরসভার মেয়র সমর্থিত নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে থানা মোড়ের দিকে যান। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ারের নেতৃত্বে একটি মিছিল থানা মোড়ে আসামাত্রই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়, তাঁর ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি, অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল ও কাজী ডিজিটাল হসপিটাল। দুই পক্ষের  ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় থানা মোড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সন্ধ্যা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্তও বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়।

রাত আটটায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান তাঁর বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ করা সম্পূর্ণ সংগঠনবিরোধী। তাঁদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করার এখতিয়ার নেই। তারপরও মেয়রের নেতৃত্বে গাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকান, হাসপাতাল ভাঙচুর এবং নেতা–কর্মীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা। সমাবেশে হামলা করে অনেক নেতা–কর্মীকে আহত করেছে। তাঁরা নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন, সহসভাপতি কাজী আবদুল মালেকসহ অনেক নেতা–কর্মী উপস্থিত  ছিলেন।
মধুপুর পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ‘সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম করার অপরাধে’ কেন বহিষ্কার করা হবে না—মর্মে শোকজ করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কার্যক্রম করার এখতিয়ার তিনি হারিয়েছেন। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির আয়োজন করে। এই সমাবেশে আগত নেতা–কর্মীদের থানা মোড়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কর্মীরা হামলা করে আহত করেন। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের শান্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।

মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হোসেন জানান, তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।