বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র লুট করে নিজেদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রমাণ করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তবে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির স্থগিত আলোচনা আবার শুরু করা উচিত। আর কেএনএফের বিষয়ে সাধারণ বম ও নেতাদের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি।
কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে বান্দরবানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ১২টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক নেতারা এই মতামত দিয়েছেন। মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, ম্রো, খুমিসহ ১২টি জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক নেতাদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করে জেলা পরিষদ। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে।
শুরুতে সভা আহ্বানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। তিনি বলেন, ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিচয় তুলে ধরেছে। এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সমীচীন নয় বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করেছে। এর আগে কেএনএফের প্রধান নাথান বমকে সরাসরি উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি তা রাখেননি। উল্টো তৃতীয় দফা সভার আগে কেএনএফ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে, যাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে।
সভায় ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সভাপতি খুশীরায় ত্রিপুরা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য বাসিংথুয়াই মারমা বলেছেন, কেএনএফ দাবি করে, তারা ছয়টি জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আন্দোলন করে। কিন্তু ম্রো, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই—পাঁচটি জনগোষ্ঠী সভা ডেকে ঘোষণা করেছে তারা কেএনএফের সঙ্গে নেই। বম জনগোষ্ঠীরও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার। না হলে মানুষ মনে করছেন বম জনগোষ্ঠীর সবাই কেএনএফের সঙ্গে জড়িত।
অবশ্য সভায় উপস্থিত জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম বলেছেন, বমদের সবাই কেএনএফের সঙ্গে জড়িত, এ অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু আতঙ্কের কারণে সাধারণ বমরা তাঁদের অবস্থান তুলে ধরতে পারছেন না।
তবে বিপথগামী ও অপরাধী বম তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন হেডম্যান-কার্বারি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হ্লাথোয়াইহ্রী মারমাসহ উপস্থিত অধিকাংশ বক্তা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মারমা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মংসিনু মারমা, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম, আইনজীবী উবাথোয়াই মারমা, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম, আইনজীবী কাজী মহতুল হোসেন প্রমুখ। সভায় অংশ নেন হেডম্যান (মৌজাপ্রধান), কার্বারিসহ (পাড়াপ্রধান) বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও চলতি বছরের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে দুটি সমঝোতা স্মারকও হয়েছে। তবে রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় ৪ এপ্রিল কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দেয় কমিটি।