বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি ১ শতাংশের কম  

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একটি আড়ত থেকে ট্রাকে ওঠানো হচ্ছে পেঁয়াজফাইল ছবি

দেশে পেঁয়াজ আমদানির বড় উৎস ভারত। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। আমদানির বড় উৎস বন্ধের পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে চাহিদা মেটানোর কথা বলা হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। তবে এরপরও বিকল্প বাজার থেকে সেভাবে আমদানি হয়নি।

ভারত ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিকল্প দেশ মিয়ানমার, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, মিসর ও নেদারল্যান্ডস। তবে চলতি অর্থবছরে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মোট আমদানির ১ শতাংশের কম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাস থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার টন। এর মধ্যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে ভারতীয় পেঁয়াজই এসেছে প্রায় ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৭ টন।

ভারত ছাড়া চলতি অর্থবছরে পেঁয়াজ এসেছে চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডস থেকে। সব মিলিয়ে বিকল্প এই ছয় দেশে থেকে পেঁয়াজ এসেছে কেবল ৫ হাজার ১৭৪ টন। যা মোট পেঁয়াজ আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বিকল্প দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। তুর্কি, মিসর, পাকিস্তানসহ ১৭টি দেশ থেকে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছিল, যা মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি। মোট আমদানি হয়েছিল ৬ লাখ ৮১ হাজার টন।

‘ঝুঁকি’ নিতে চান না ব্যবসায়ীরা
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে পেঁয়াজের বাজার আমদানিনির্ভর। আর আমদানির বড় উৎস ভারত। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে সময় লাগে কম। আর অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।

ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক মিয়ানমার। তবে দেশটির রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। ফলে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে না।

এর বাইরে রয়েছে পাকিস্তান, মিসর, চীন, নেদারল্যান্ডস। তবে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সরবরাহকারী খুঁজে বের করা, এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমতি, ঋণপত্র খোলার মতো প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। ডলার-সংকটে ঋণপত্র খোলা নিয়ে এখন জটিল হয়েছে। আর এ কারণে আমদানিতে শুধু সমুদ্রপথেই সময় লাগে ১৩ থেকে ৩০ দিন।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লা মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আসতে প্রায় এক মাস লেগে যাবে। এর মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে বাজারে দাম কমে যাবে। তাই লোকসানের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।  

এক দিনে বেড়েছে দাম
দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার ১১২ থেকে ১১৩ টাকায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল। দিন ব্যবধানে আজ বুধবার বাজারে পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকায় ঠেকেছে। এর আগে ভারত ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করবে—এমন খবরের দাম কমেছিল বাজারে। তবে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় আবার বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।  

আজ সকালে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন মানভেদে ভারতীয় পেঁয়াজ ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার আশপাশে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে আজ। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। দেশীয় জাতের ‘হালি’ পেঁয়াজ আসতে এখনো এক-দুই সপ্তাহ লাগবে। রোজায় দাম স্বাভাবিক রাখতে হলে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।  

এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে নিজেদের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানির বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১৭০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও কিছু ভারতীয় পেঁয়াজ আড়তে এলে দাম কমে ১০০ টাকার আশপাশে নেমে আসে।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে বুধবার ট্রাক বোঝাই গাড়ি এসেছে কেবল একটি। মুড়িকাটা প্রায় শেষের দিকে। হালি পেঁয়াজ এলেও রোজায় চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে আমদানি করা পেঁয়াজও দরকার।