কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত লাখো পর্যটকের বর্ষবিদায়

বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে পুরোনো বছরকে বিদায় দেন পর্যটকেরা। শনিবার বিকেলে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের নির্জন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতেছবি: প্রথম আলো

বিকেল সাড়ে চারটা। পশ্চিমাকাশে লাল আভা ছড়িয়ে নিস্তেজ হওয়ার পথে সূর্য। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে জড়ো হন অন্তত ৭০ হাজার পর্যটক। সবার নজর সূর্যের দিকে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন, কেউ ধারণ করছেন ভিডিও চিত্র। এমনই এক আনন্দময় পরিবেশে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে হাত নেড়ে বর্ষবিদায় জানালেন লাখো পর্যটক।

সুগন্ধা পয়েন্টের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানী, পাটোয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতেও পুরোনো বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানান বিপুলসংখ্যক পর্যটক। কেউ প্যারাসেইলিংয়ের মাধ্যমে ২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগ করেন।

আরও পড়ুন

বর্ষবিদায় কিংবা থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে আজ শনিবার বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে আতশবাজি, পটকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যান্ড সংগীত নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। এ জন্য পর্যটকদের অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সূর্যাস্তের পর অনেকে সৈকত থেকে হোটেলে ফিরে যান। কেউ কেউ রাতের বাসে গন্তব্যে রওনা দেন।

শনিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে সূর্যাস্ত দেখছিলেন ঢাকার রমনা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী জয়নুল আবেদীন। সূর্যাস্তের পর তিনি তাড়াহুড়ো করে হোটেলে ফিরছিলেন।

বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়। এবার সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্যান্য বারের তুলনায় উপস্থিতি ছিল কম। শনিবার সন্ধ্যায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

জয়নুল আবেদীন বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে সৈকতে বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জঙ্গি হামলা বা নাশকতার মতো খারাপ কিছু যেকোনো দিনই ঘটতে পারে। প্রতিদিন সৈকতে লাখো মানুষ থাকে। সেখানেও ঘটতে পারে। থার্টি ফাস্ট নাইটেও ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারত। প্রশাসন বা হোটেলমালিকেরা চাইলে পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারতেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ড কর্মীরা বলেন, বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে প্রতিবছর সৈকতে অন্তত ৩ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। কিন্তু আজ গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম কম হয়েছে। সৈকতে থার্টি ফাস্ট নাইটের আয়োজন নেই দেখে অনেকে আগেভাগে ফিরে গেছেন।

আরও পড়ুন

কলাতলী সৈকতঘেঁষা পরিবেশবান্ধব রেস্তোরাঁ প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে। রেস্তোরাঁয় গত বছর এ দিনে এক লাখ টাকার বেশি রকমারি খাবার বিক্রি হয়েছিল। তবে আজ বেচাবিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার টাকার কম। রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ ইকবাল বলেন, সৈকতে থার্টি ফাস্ট নাইটের আয়োজন না থাকায় হাজার হাজার পর্যটক বাড়িতে ফিরে গেছেন। যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁরা টেকনাফ সৈকত, ঐতিহাসিক মাথিনকুপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক বা সাগর পাড়ি দিয়ে ছুটছেন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে।

হোটেলমালিকেরা বলেন, স্কুল-কলেজে ভর্তিযুদ্ধ ও নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসব থাকায় অনেকে বাড়ি ফিরছেন। তা ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিবহন, খাবার, হোটেলের কক্ষ ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন পর্যটকেরা।

২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখছেন দুই পর্যটক। শনিবার বিকেলে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের নির্জন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতের উন্মুক্ত জায়গায় থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট, গানবাজনাসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতবার কয়েকটি তারকা মানের হোটেলে নিজস্ব অতিথিদের বিনোদনের জন্য হোটেলে বর্ষবরণের আয়োজন থাকলেও এবার বন্ধ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, পটকা ফোটানোসহ গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেও বিকেলে বালুচরে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানিয়েছে লাখো মানুষ।

আরও পড়ুন