ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বরগুনার দুটি আসনে ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় প্রার্থীরাও নিয়মিত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। দুটি আসনে প্রায় এক বছর আগে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার শুরু করে। একই সময়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে। সম্প্রতি বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর দলটির নেতা-কর্মীরাও দুটি আসনে প্রচার চালাচ্ছেন।
জেলার ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রভাব রয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির অনুপস্থিতিতে এবার বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াত ইসলামীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এখনো তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষ শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন।
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী)
বিএনপি এই আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এই প্রথম তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য গত ১২ নভেম্বর ছয়জন নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন করেছিলেন। অবশ্য সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি দল। আবেদনকারীদের একজন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হুমায়ূন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা সবাই এখন নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সবাই তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন।
এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের জেলা শাখার উপদেষ্টা মাহমুদুল হোসাইন অলিউল্লাহ। তিনি প্রচারের পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করছেন। অংশ নিচ্ছেন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে।
জেলা জামায়াতের আমির মহিবুল্লা হারুন দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এর পর থেকে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। মহিবুল্লা হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপজেলা পরিষদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। আমি মনে করি, আমার সেই ভোট কমেনি।’
আসনটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মাহবুব রহমানকে (অভি)। তিনি দলের বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে থেকে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইনকে।
বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী)
কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে (মণি) প্রার্থী করেছে বিএনপি। এর আগে ২০০১ সালে তিনি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি দুবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলেন। নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চারবার নির্বাচন করে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। স্বাধীনতাবিরোধীদের মানুষ ভোট দেবে না। কারণ, তারা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। এই এলাকায় যত উন্নয়ন হয়েছে, তা আমার হাত ধরেই হয়েছে। এটা এলাকার মানুষ বারবার মূল্যায়ন করেছে। এবারও করবে এবং আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য সুলতান আহমদকে আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বরগুনা-১ (সদর-বেতাগী) আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন। সুলতান আহমেদ অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত ২০ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আমরা আশা করছি, এবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। এটা নিশ্চিত হলে আমরা বিজয়ী হব। কারণ, মানুষ পরিবর্তন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’
এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনটির বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান কাশেমী। এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মিজানুর রহমান কাশেমী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে ইসলাম, কল্যাণের পক্ষে গণজাগরণ ঘটেছে। এবার মানুষ পুরোনো ব্যবস্থা চায় না। আমরা ভোটের মাঠে অসাধারণ সাড়া পাচ্ছি।’
এখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মো. রফিকুল ইসলামকে। তিনি বরগুনা জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।