ভাঙনে হুমকিতে দুই ইউনিয়ন

ভাঙনের ফলে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, সাত-আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে।

নদীভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে পাঁকা-নারায়ণপুর পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় ভবন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঁকা গ্রামে গত বৃহস্পতিবার
ছবি : প্রথম আলো

পদ্মা নদীর ভাঙনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন হুমকিতে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, চার কিলোমিটারজুড়ে চলছে এ ভাঙন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে না পারলে এ দুটি ইউনিয়নের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

জেলা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজউদ্দীন গত বৃহস্পতিবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম।

পরিদর্শক দলের সঙ্গে ভাঙনকবলিত দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের পাঁকা-নারায়ণপুর পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে গেলে দেখা যায়, নদীতে বিলীন হওয়ার আগে বিদ্যালয় ভবনের ভেঙে নেওয়া ইট ও টিনের চাল স্থানান্তর করছেন লোকজন। উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকারম হোসেনসহ আশপাশের লোকজন বলেন, গত দুই মাসের ভাঙনে পাঁকা-নারায়ণপুর পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় ৪০০ বসতভিটা ও শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, সাত-আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিজিবির চারটি সীমান্ত ফাঁড়িসহ প্রায় পুরো জনপদ এখন হুমকির মুখে। পদ্মার ভাঙনে এর আগের বছর দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে যায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসা বলেন, এলাকায় ৩২ হাজার বিঘা ফসলি জমির মধ্যে ২০ হাজার বিঘা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে চরাঞ্চলের এ দুটি ইউনিয়নে বিদ্যুতায়ন করা হয়। এ জন্য সরকার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অনেকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ভেঙে পদ্মার এক চরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের এখন খাদ্যসহায়তা দরকার।

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মুঠোফোনে বলেন, কয়েক বছরের ভাঙনে পাকা ইউপির অর্ধেক এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এবার তিনটি গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্‌ল স্থাপন ও ১১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করে পদ্মার পারের চরের দুটি ইউপিতে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। আছে একটি মিনি সোলার গ্রিড। এর মধ্যে ভাঙনে ২০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ভাঙন চলছে কয়েক বছর ধরে। আপাতত এ দুই জনপদ রক্ষায় দ্রুত অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোকে জানিয়েছেন।

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজউদ্দিন বলেন, ভাঙন এখন প্রবল আকারে চলছে চার কিলোমিটারজুড়ে। দেড় কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে গেছে নদী। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।