সেতুর জন্য আর কত অপেক্ষা

সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। এলাকার ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। 

খেয়ানৌকায় মাঝি নেই। শিশুরা নিজেরাই রশি টেনে ছোট যমুনা নদী পার হচ্ছে। গত শুক্রবার দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার চৌঘুরিয়া গ্রামে
প্রথম আলো

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম চৌঘুরিয়া। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। এর পূর্ব পাশে হাকিমপুর উপজেলার নয়ানগর গ্রাম। সেতু না থাকায় নদীর পশ্চিম দিকে চৌঘুরিয়া, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁও, দামোদরপুর ও দাউদপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে কাটলাবাজার ও খট্টামাধবপাড়া গ্রাম হয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানে করে নয়ানগর যেতে হয়। এতে সড়ক পথে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়।

এলাকাবাসীর দাবি, নদীর ওপর একটি পাকা সেতু হলে দূরত্ব কমে যাবে। এতে দুই উপজেলার মানুষের চলাচল আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এলাকাবাসীর দাবি একটি সেতুর। বিভিন্ন সময়ে সেখানে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এলাকার ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। 

দেশ স্বাধীনের পর থেকেই শুনতেছি এখানে একটি সেতু হবে। কিন্তু আজও এখানে একটি সেতু হলো না।
নজরুল ইসলাম, চৌঘুরিয়া গ্রামের পানচাষি 

নদীর পশ্চিম পাশের চৌঘুরিয়া, দামোদরপুর ও রণগাঁও গ্রাম থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী নদীর ওপারে নয়ানগর উচ্চবিদ্যালয় ও হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেন। এসব শিক্ষার্থী বর্ষা মৌসুমে নদীর ঘাটে সময় মতো নৌকা না পাওয়ায় ও ঘাটে অনেক সময় মাঝি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন। শুধু তা–ই নয়, অনেক সময় মাঝি না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকার বৈঠা ধরে বা দড়ি টেনে নদী পার হন। 

চৌঘুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও নয়ানগর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপ্লব হোসেন বলে, ‘গতকাল মঙ্গলবার স্কুলে যাওয়ার সময় নদীর ঘাটে মাঝি না থাকায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্কুলে যেতে অনেক দেরি হওয়ায় প্রথম ক্লাসটি করতে পারিনি। বর্ষাকালে নদীতে খুব বেশি পানি থাকে। নৌকা করে নদী পার হতে ভয় লাগে। নদীর পাড়ে ঘাটলা না থাকায় নৌকায় উঠতে ও নামতেও অনেকে নদীর পানিতে পড়ে যায়। এখানে একটি সেতু হলে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের অনেক উপকার হবে।’ 

নয়ানগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘চৌঘুরিয়া গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী আমাদের এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। নদীতে সেতু না থাকায় এবং ঘাটে ঠিক সময়ে মাঝি না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে দেরিতে আসে।’ 

শুকনা মৌসুমে ঘাটের ইজারাদার ওই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাত্রী পারাপার করেন। কিন্তু জনসাধারণের অতিরিক্ত চলাচলে অল্প দিনেই সেটি ভেঙে চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে। আর এ বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে রিকশা-ভ্যান বা পান বহনকারী যান পারাপার করা যায় না। 

বিরামপুর উপজেলার চৌঘুরিয়া, দামোদরপুর, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁ ও দাউদপুর গ্রামে দুই হাজারের বেশি পানের বরজ রয়েছে। চাষিরা পান বিক্রি করতে এ এলাকার বড় বাজার হাকিমপুরের হিলি হাটে যান। খেয়া নৌকা এড়াতে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। অপর দিকে, হাকিমপুর উপজেলার মোংলা, নয়ানগর, খট্টামাধবপাড়া ও ঘাসুড়িয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে মোটরসাইকেল ও রিক্সা-ভ্যান যোগে একইভাবে ঘুরে আসতে হয়। বিশেষ করে নদীর পশ্চিম পাশের পানচাষী ও রোগীরা এ পথে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।

চৌঘুরিয়া গ্রামের পানচাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকেই শুনতেছি এখানে একটি সেতু হবে। এ জন্য অনেকবার মাপজোখও হয়েছে। কিন্তু আজও এখানে একটি সেতু হলো না। বেঁচে থাকতে মনে হয় আর এখানকার সেতু দেখতে পাব না।’ 

বিরামপুরের উপজেলা প্রকৌশলী এফ এ এম রায়হানুল ইসলাম বলেন, চৌঘুরিয়া নদীর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে গত দুই বছর আগে একটি প্রস্তাবপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ বিষয়ে একটি ডিও লেটার দিলে সেখানে একটি সেতুর জন্য বরাদ্দ পাওয়া সহজ হবে। 

কাটলা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস আলী মণ্ডল বলেন, উপজেলা থেকে প্রকৌশলীরা কয়েকবার মাপজোক করে গেছেন। কিন্তু সেতু এখনো হয়নি। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের একটি ডিও লেটার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।