হাওরে যেদিকে তাকানো যায়, লাল শাপলার ছড়াছড়ি

এখানে-ওখানে ঝোপ বেঁধে আছে লাল শাপলা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জুমাপুরেছবি: প্রথম আলো

চারদিকে শান্ত প্রকৃতি। হেমন্তের ঘুম ঘুম সকালে হালকা কুয়াশা নেমেছে। গাছপালা, ঘরবাড়ি সবকিছু মনে হয় শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু হাওয়া বইছে। গাছপালার শুকনা ও হলুদ পাতারা ঝরে পড়ছে। মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরে যাওয়ার পথে এ রকম একটা মুহূর্তে হঠাৎ করেই একটি মাঠের ভেতর চোখ আটকে যায়। সেখানে তখন যেন লাল রঙের ঢেউ বইছে।

প্রকৃতি হয়তো এ রকমই, অমন করেই সারাটা বছর ধরে কোনো না কোনো রূপে তার আপন হৃদয় মানুষের জন্য খুলে রাখে। একবার তার রূপে চোখ পড়লে, চোখ ফেরানো অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে যায়। ফেরার পথে ওখানে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হাওরপারের জুমাপুর গ্রামের মাঠ তখন হেমন্তের সকালের আলোতে ভেসে যাচ্ছে। মাত্র হাওরের পানি মাঠ থেকে নেমেছে, মাঠ এখনো ফাঁকা। সেই মাঠের ভেতর টুকরো-টাকরা লাল রঙের তরঙ্গ যেন ঢেউ খেলছে। দেখে মনে হয়, ‘তোমার মুখের রূপ কতো শত শতাব্দী আমি দেখি না/ খুঁজি না।’

কাউয়াদীঘি হাওরপারের অন্তেহরিতে যাওয়ার সড়ক থেকে মাঠটির অবস্থান পূর্ব দিকে, কিছুটা দূরে। কেউ একজন মাঠে ঢোকার বড় আলপথটির মুখে প্লাস্টিকের জালে বেড়া দিয়ে রেখেছেন। তা ডিঙিয়ে আলপথ ধরে মাঠের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে, টুকরো টুকরো লাল রঙের একেকটি প্রদীপ জ্বলছে সেখানে। মানুষের ঘরবাড়ির পাশে কোনো এক সময় ওখানে লাল শাপলা সংসার সাজিয়েছে। কোথাও একটি করে শাপলা ফুটেছে, কোথাও এক-দুটো করে। কোথাও ঝাড় বেঁধে ফুটেছে ফুল-কন্যারা।

দেখে মনে হয় লাল শাপলার গালিচা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জুমাপুরে
ছবি: প্রথম আলো

তখনই কোথা থেকে ছুটে আসে মাঠ-সংলগ্ন বাড়ি থেকে মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থী সোহান আহমদ। সে ঝটপট কাদায় নেমে কয়েকটি শাপলা ফুল তুলে নিয়ে আসে। বলে, এই ফুলগুলো তার ছোট বোনকে খেলার জন্য দেবে। দেখতে দেখতে বোনটিও সড়কে চলে এসেছে। বোনের হাতে তখনই শাপলা ফুলের গোছা তুলে দেয়। ফুল হাতে নিয়ে চোখেমুখে সরল আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে মেয়েটির।

তাদের দেখাদেখি আরও বেশ কজন শিশু-কিশোর এসে ভিড় করে। তাদের কাছ থেকেই জানা যায়, জুমাপুর গ্রামে কাছাকাছি আরেকটি মাঠ আছে। সেখানে অনেক লাল শাপলা ফুটেছে। এই মাঠের চেয়ে অনেক বেশি ফুল সেখানে।

লোকজনের কাছে খোঁজ নিয়ে সেই স্থানে গিয়ে দেখা গেল, বেশ দূরে মাঠের বুক অনেকটা জায়গাজুড়ে লাল হয়ে আছে। আগের স্থান থেকে ওই জায়গায় অনেক বেশি ফুল। ধানখেতের পরই বিশাল এলাকাজুড়ে লাল শাপলার মুগ্ধ করা জলভাসি সুখ। কিছুদিন আগেও এখানে হাওরের পানি ছিল। সেই পানি এখন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। এখানে জমির নরম মাটিতে শিকড় ছড়িয়ে শাপলারা ফুটেছে।

যেদিকেই তাকানো যায়, লাল শাপলার ছড়াছড়ি। হেমন্তের রোদ তখন আরও কিছুটা তেতে উঠেছে। আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে লাল শাপলার মায়াবী মুগ্ধতা। কিছুদিন থেকে জুমাপুরের মাঠের কয়েকটি স্থান এমনই লাল হয়ে আছে। হয়তো আরও কিছুদিন অমনই লাল হয়ে থাকবে।