কোরবানির মাংস বিক্রি করে রান্নার মসলা কিনছেন লিমা আক্তার

কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে অনেকে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। সেখান থেকে অনেকে মাংস কিনছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

পলিথিনে মোড়ানো মাংস নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে লিমা আক্তার হাজির হলেন রাজশাহী নগরের রেলগেট এলাকায়। সেই মাংস ওজন দিলেন এক ব্যবসায়ী। তিন কেজির একটু বেশি হলো। প্রতি কেজির দাম দেওয়া হলো ৬৫০ টাকা।

লিমা আক্তার রাজশাহী নগরের কেদুর মোড় এলাকার বাসিন্দা। বিকেল পাঁচটার দিকে রেলগেট এলাকায় লিমা বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়েছেন। মাংস চেয়েছেন। কেউ তিন টুকরা, কেউ দুই টুকরা করে দিয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত সাড়ে চার কেজির বেশি মাংস পেয়েছেন তিনি। দেড় কেজির বেশি রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিলেন। এই টাকা দিয়ে রান্না করার মসলাপাতি কিনে বাসায় ফিরবেন।

ওই মাংস কিনে নিলেন ফারুক হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। ৬৫০ টাকা দরে কিনে তিনি তাৎক্ষণিক ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেন। ফারুক হোসেন বলেন, ‘এবার মাংস কম আসতেছে। সন্ধ্যা হলে যদি মাংসের আমদানি বেশি হয়, তখন কম দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করতে পারব।’

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাগরপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগর ঘুরে দেখা গেছে, রেলগেট, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, দড়িখড়বোনা, লক্ষ্মীপুর, হড়গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে বসেছে মাংসের বাজার। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার বসেছে রেলগেট এলাকায়। শহরের বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা সারা দিন মাংস টুকিয়ে এখানে এসে বিক্রি করছেন। আবার সেখান থেকে কিনে নিচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ কোরবানি না দেওয়া মানুষেরা। এলাকাভেদে মাংস কেনা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। আর সেই মাংস কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরের আশপাশে।

নগরের সাগরপাড়া এলাকায় একদল নারীকে দেখা গেল বাসাবাড়ি থেকে মাংস চেয়ে নিচ্ছেন। প্রত্যেকের হাতেই ব্যাগ। তাঁরা জানালেন, বছরে একবারই মাংস খাওয়ার সুযোগ হয়। এই সময়ে পরিবারের ছোট-বড় সবাই মাংস আহরণে নেমে পড়েন। দুপুরের পর খাওয়ার জন্য কিছুটা রেখে দিয়ে বাকিটা বিক্রি করে দেন।

নগরের রেলগেট এলাকায় আসাদুল হক (৫০) নামের আরেক ব্যক্তিও এলেন সদাই ব্যাগে করে কিছু মাংস নিয়ে। সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী ওজন করে দেখলেন, দেড় কেজির মতো গরুর মাংস। তাঁর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় দাম দেওয়া হলো ৬০০ টাকা কেজি করে। আসাদুল হক বলেন, তিনি কয়েকটি এলাকা ঘুরে মাংস সংগ্রহ করেছেন। তাঁর স্ত্রী গেছেন অন্য এলাকায়। স্ত্রীর সংগ্রহ করা মাংস রান্না করা হবে।

ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, হাটের মতোই এখানে মাংসের দাম। হাড় ও চর্বির পরিমাণ কম হলে দাম বেশি, আর ওগুলো বেশি হলে দাম কম। নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাংস বিক্রি করে আয়ও হয়। তাঁরা মাংস মেপে দিয়ে কিছু টাকা আয় করছেন।

মো. মামুন নামের এক ব্যক্তি ৬৫০ টাকা দরে ৩ কেজি মাংস কেনেন রেলগেট এলাকা থেকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শহরের নতুন বাসিন্দা। কোরবানি দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। টাকাপয়সা জমিয়ে মাংস কিনলেন। মাংস না থাকলে ঈদটা হয় না।

শহরের আরেক নতুন বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাংস না কিনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাংস বিক্রি করতে আসা এক ব্যক্তিকে পেয়ে যান। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়েই মাংস কিনে নিলেন। নজরুল বলেন, ব্যবসায়ীদের হাতে পড়লেই ৫০ টাকা কেজিতে বেড়ে যাবে। এ কারণে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ঈদে সবাই কোরবানি দিতে পারেন না। কিন্তু মাংস তো ছেলেমেয়েরা খেতে চায়। এমনিই বাজারের মাংস কিনে খাওয়া হয়, কিন্তু কোরবানির মাংস বলে কথা। এ কারণে বাজার দামের সমান হলেও মাংস কিনলেন।