রাজশাহীতে বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা আয়োজন
‘বাতিঘরের বয়স এবার একুশে পড়ল। এখন বাতিঘরকে নিয়ে আমাদের একটু চিন্তাভাবনা করতে হবে। তাই এই আয়োজন। আমরা গান শুনব, আবৃত্তি শুনব, আলোচনা হবে, কেউ বই পড়বেন। এরই মধ্যে মানুষ আসবে-যাবে; অনুষ্ঠান চলবেই। কিছুটা অনানুষ্ঠানিকভাবেই আমরা বাতিঘরের অনুষ্ঠান করি। বাতিঘর রাজশাহীর, রজনীকান্ত সেনও ছিলেন এখানকার মানুষ। তাঁর গান দিয়েই শুরু হোক।’
উপস্থাপক জাফর আহমদ রাশেদের এমন ঘোষণায় শিল্পী তানজিলা জিনাত শুরু করলেন, ‘জাগাও পথিকে, ও সে ঘুমে অচেতন।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের খানসামার চক এলাকায় বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে রজনীকান্তের এই গান যেন অচেতন পাঠককেই ডাক দিয়ে গেল।
প্রকৃতিতে স্বমহিমায় এসেছে শ্রাবণ। অনুষ্ঠানটি শুরুর আগেও কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েছে। শিল্পী তাই এবার বৃষ্টির গান ধরলেন, গাইলেন রবীন্দ্রনাথের ‘নিশীথ রাতের বাদল ধারা...।’
গানের একফাঁকে আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ–আল মামুন। তিনি ভালো ও মন্দ বই নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ তুলে ধরে বললেন, কিছু বই পুড়িয়েও দেওয়া দরকার। এতে কোনো চিন্তার খোরাক নেই; বরং পাঠককে বিপথগামী করতে পারে। আবার তিনিই শোনালেন বই নিয়ে আশার কথাও। বললেন, ‘বই ছাড়া আমার চলে না। প্রতিদিন পড়ি। হাজারো বই আমাকে পড়তে হয়।’
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে একক ও দলীয় আবৃত্তি শোনান ‘স্বনন’ সংগঠনের শিল্পীরা। এরপর অনুষ্ঠানের মেজাজ ঘুরিয়ে দিলেন শিল্পী অনিক রায়। তিনি গাইলেন, ‘জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আজও আমি...।’
এবার বাতিঘরের গোড়ার কথা জানিয়ে স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাস বলেন, চট্টগ্রামে ১০০ বর্গফুটের একটি জায়গায় বাতিঘর যাত্রা শুরু করেছিল। তাঁর মতে, ‘এখন বই পড়া কমে যায়নি, কমেছে সিডি আর সিনেমা বিক্রির দোকান। বইয়ের চাহিদা যত দিন থাকবে, বাতিঘর তত দিন পাঠকদের সঙ্গে থাকবে। অনেক অশুভ তৎপরতা আমাদের দেশে আছে। তারপরও অনেক ভালো মানুষ আমাদের দেশে আছেন। এই মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ুক। আমাদের ধারণা যিনি বই পড়েন, তিনি অন্যায় করার চেষ্টা তুলনামূলক কম করেন। বাচ্চাদের বলব, গল্পের বইটা একটু হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখো। তারপর পড়ে দেখো শেষ পর্যন্ত বইয়ের মধ্যে কী মজা আছে দেখো।’
এভাবে গল্প, গান আর আড্ডায় এগিয়ে চলে বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনানুষ্ঠানিক আয়োজন।