জামায়াতের মতো বিএনপিরও রাজনৈতিক অধিকার থাকতে পারে না: তারানা হালিম

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমছবি: সংগৃহীত

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ‘আমাদের ৩০ লাখ শহীদকে নিয়ে বিতর্কের সবকিছু সৃষ্টি করেছে বিএনপি ও জামায়াত। আর কেউ কিন্তু বিতর্কের সৃষ্টি করেনি। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তাঁরা স্টুপিডের মতো কাজ করেছেন। আমাদের দেশের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যাঁরা এ কথা বলেন, জামায়াতের মতো তাঁদেরও বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরোধিতা করলে বিএনপি র কি স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকে?’

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তারানা হালিম এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ এ সভার আয়োজন করে।

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারানা হালিম। তিনি বলেন, যে কারণে ভিয়েতনামকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে চায় না, যে কারণে পাকিস্তান কখনোই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায় না;  যে কারণে মার্কিন সরকার হিরোশিমা-নাগাসাকির নিরীহ জনগণের ওপর পারমাণবিক বোম ফেলার পরও ক্ষমা চায় না; যে কারণে আমেরিকা ও চীন সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে চায় না; কারণ, তাদের ইতিহাসটাও প্রকাশিত হয়ে পড়বে। সেই একই কারণে আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। যত দিন জামায়াত-শিবির থাকবে, তত দিন এই বিভাজন থাকবেই।’

গণহত্যা সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘গণহত্যায় কত সংখ্যা বা লাশের দরকার? ৩০ লাখ, ৩ লাখ, নাকি ১ লাখ। গণহত্যার যে সংজ্ঞা, সেখানে চারটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো জাতিগত ব্যাপার, ধর্মীয় গোষ্ঠী, এথনিক ও জাতিগত গ্রুপ।’

উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘বিশ্বে এমন অনেক এথনিক গ্রুপ আছে, যাদের সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০। তাদের সবাইকে যদি মেরে ফেলা হয়, তাহলে কি সেটা গণহত্যা হবে না? গণহত্যা মানে কী? ব্যাপক হত্যা। জেনোসাইড যে হয়েছে, তারা যতই স্বীকৃতি না দিক, আমরা কতটা দিচ্ছি? আমরা বাঙালিরা শত শতাংশই কি বলছি যে জেনোসাইড ঘটেছে। বলছি না তো। সমস্যাটা ওইখানেই।’

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা
ছবি: সংগৃহীত

আজকের সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে গণহত্যা দিবস রয়েছে, সেটা পাল্টানোর কথা বলছি না। আমরা চাচ্ছি, শুধু ২৫ মার্চ নয়, বাংলাদেশের ৯ মাসের স্বাধীনতাযুদ্ধে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটাকে “গণহত্যা” বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই সময়ে বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই স্বীকৃতি বিশ্বদরবারের কাছে চাচ্ছি।’

ওয়ান বাংলাদেশের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক নবনীতা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়ান বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক মো. রশীদুল হাসান।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শাহ আজম, রাবির সহ-উপাচার্যদ্বয় মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও মো. হুমায়ুন কবীর। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।