আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে সভায় হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনুস সরণি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত পরিচালনা কমিটির সভায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। কলেজের বাইরে সন্ত্রাসীদের হাঁসুয়ার কোপে আহত হয়েছেন বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষের কক্ষে পরিচালনা কমিটির সভা চলার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদরুল আলমের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন হাঁসুয়া ও লাঠি হাতে এ হামলা চালান। সাদরুল আলম ভেতরে ঢুকে দাবি করেন, সভায় তাঁরা উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের বোঝানো হয়, এটা নিয়মের মধ্যে পড়ে না। তাঁদের পাশের কক্ষে থাকার অনুরোধ জানানো হয় এবং তাঁদের একজনকে কমিটির কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু তাঁরা সেটা না মেনে সাদরুল আলমের নির্দেশে মারধর ও ভাঙচুর শুরু করেন। তাঁদের মারধরে আহত হন অফিস সহকারী মো. তাইসুদ্দীন ও ল্যাবরেটরি সহকারী ইউনুস আলী। হামলাকারীরা অধ্যক্ষের টেবিলের ওপরের কাচ, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিভিডি ভেঙে সেগুলো নিয়ে যান। এ ছাড়া জানালার কাচ ও ১৫-২০টি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন। আহত দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, সাদরুল আলম ও তাঁর লোকজনের দাবি, এর আগে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে আবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে, যাতে তাঁদের লোকজন আবেদন করতে পারেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, পরিচালনা কমিটির সভা ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাঁর (অধ্যক্ষ) নেই। এ জন্য সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি আলোচনার আগেই হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীরা অধ্যক্ষের টেবিলের ওপরের কাচ, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিভিডি ভেঙে সেগুলো নিয়ে যান। এ ছাড়া জানালার কাচ ও ১৫-২০টি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান স্থানীয় লোকজন। থানায় সালিসও বসে। শেষে কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুল মান্নান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হয়, আজকের পরিচালনা কমিটির সভায় আমার দুজন প্রতিনিধি থাকবে। সভায় আগের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুনভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁরা এতে রাজি হন। কিন্তু সভায় প্রতিনিধি গেলে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে যান।’ সাদরুল আলম বলেন, ‘ভাঙচুরের ঘটনা নিজেরাই ঘটিয়ে দায় চাপাচ্ছেন আমার ওপর। আমি কলেজের মাঠে ছিলাম, অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকিনি। অধ্যক্ষের লোকজন ও চেয়ারম্যানের লোকজন আমার ও আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার পরপরই আমাকে ফোন দেন। আমি ঘটনার বর্ণনা দিই। তিনি আমার ফোনেই সাদরুল আলমের সঙ্গে কথা বলতে চান। আমি সাদরুলের কাছে ফোন দিলে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এ সময় একজন সামনে থেকে হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করলে আমি হাত দিয়ে তা আটকাই। ওই সময় পেছন থেকে একজন আঘাত করেন। মোটা জ্যাকেট ভেদ করে হাঁসুয়ার কোনা আমার ঘাড়ে আঘাত করে। আমি উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।’ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কলেজে হামলার নেতৃত্বে ছিলেন সাদরুল আলম। তবে আমার ওপর হামলায় তাঁর কোনো ভূমিকা নেই।’

গোমস্তাপুর থানার ওসি মাহবুবর রহমান বলেন, ‘কলেজের কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। এতে দুজন সামান্য আহত হয়েছেন। পুলিশ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’