অবৈধভাবে শতাধিক গাছ কর্তন

একটি আঞ্চলিক সড়কের শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন এক ঠিকাদার। গাছগুলোর বেশির ভাগই মেহগনি ও নিম।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের তরা রাথুরা এলাকায় অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে গাছছবি: আব্দুল মোমিন

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ওই মহাসড়কের দুই পাশের গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু বন বিভাগের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সড়কের বাইরে গিয়ে ঘিওর উপজেলার একটি আঞ্চলিক সড়কের শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন এক ঠিকাদার।

উপজেলার তরা রাথুরা এলাকায় ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে যুক্ত বানিয়াজুরী-ঝিটকা আঞ্চলিক সড়কে এসব গাছ কাটা হয়েছে। গাছগুলোর বেশির ভাগই মেহগনি ও নিম।

জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য মহাসড়কের নির্দিষ্ট স্থানে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই সড়কের গাছ কাটা বেআইনি। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা বিভাগীয় বন এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই পাশের গাছ কাটা হচ্ছে। ঘিওর উপজেলার পূর্ব তরা এলাকা থেকে বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশ প্রশস্তকরণের জন্য উভয় পাশের গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি নিয়েছে জেলার সওজ বিভাগ।

মহাসড়কের পাশের গাছগুলো বগুড়ার এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তিনি কীভাবে, কোথা থেকে গাছ কাটছেন, তা আমার জানা নেই।
আবদুস সালাম, ঠিকাদার

সম্প্রতি মহাসড়কের ওই অংশের ৪০৭টি গাছ বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করে জেলা বন বিভাগ। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে মেহগনি, শিশু, নিম, রেইনট্রি, কড়ই, বাবলা, কৃষ্ণচুড়া ও চাম্বল। কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৩টি গুচ্ছে (লট) এসব গাছ কেনার এবং কাটার অনুমতি পান মনিউর রহমান, আবদুস সালাম ও হাবিবুর রহমান নামের ৩ জন ঠিকাদার।

৫ নম্বর গুচ্ছের ঠিকাদার আবদুস সালাম তরা ক্রসব্রিজ এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশের গাছ কেটে নেন। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশের তরা রাথুরা এলাকায় বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের গাছও অবৈধভাবে কেটে নিচ্ছেন ঠিকাদার আবদুস সালামের লোকজন। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের দক্ষিণ পাশে শতাধিক মেহগনি ও নিমগাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ কেটে সেখানেই ফেলে রাখা হয়েছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৬ বছর সামাজিক বনায়নের জন্য জেলা পরিষদের জায়গায় এসব গাছ রোপণ করেছিল মুন্নু গ্রুপ। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এই শিল্প গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওই সড়কের দুই পাশে রয়েছে মুন্নু গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে আছে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুন্নু স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি গাছেঘেরা সড়কের ওই স্থানটিতে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা অবসর সময়ে বিশ্রাম নিতেন। গাছগুলো কেটে ফেলায় সেখানকার পরিবেশের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, অবৈধভাবে কেটে নেওয়া গাছগুলোর বাজারমূল্য পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবদুস সালাম বলেন, ‘মহাসড়কের পাশের গাছগুলো বগুড়ার এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তিনি কীভাবে, কোথা থেকে গাছ কাটছেন, তা আমার জানা নেই। বেআইনিভাবে বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের গাছ কাটলে এর দায় ওই কাঠ ব্যবসায়ীকে নিতে হবে।’

ওই কাঠ ব্যবসায়ীর পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর চাইলে ঠিকাদার আবদুস সালাম তা দিতে পারেননি। কথা হয় ওই কাঠ ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তরা গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের সহযোগিতায় এসব গাছ কাটা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খলিলুর। বানিয়াজুরী-ঝিটকা সড়কের ওই অংশ জেলা পরিষদের জায়গা হলেও সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে সওজ বিভাগ। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস-উল হাসান মারুফ বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি তাঁদের অধীনে নয়। এ বিষয়ে বন বিভাগ, জেলা পরিষদ, মুন্নু গ্রুপ পদক্ষেপ নিতে পারে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দিন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে তিনি অবগত নন।