নরসিংদীতে নির্মাণাধীন বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার
নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মো. আশরাফুল নামের তিন বছরের একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের আল আমিন মিয়ার নির্মাণাধীন বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
আশরাফুল সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের মো. আলফাজ মিয়ার ছেলে। তবে আলফাজ মিয়া স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চিনিশপুর ইউনিয়নের উত্তর ঘোড়াদিয়া গ্রামে বাস করেন। আলফাজ কলা বিক্রি করেন আর তাঁর স্ত্রী আম্বিয়া বেগম ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ঘটনাস্থল থেকে ওই দম্পতির বাড়ি অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে।
শিশুর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্মাণাধীন ওই বাড়ির পেছনের দিক দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে শিশু আশরাফুলকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করেন। খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়ে ওই শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
পুলিশ বলছে, শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া স্থানীয় লোকজন তাকে চিনতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলফাজ মিয়া ও আম্বিয়া বেগম ঘটনাস্থলে এসে পরিচয় শনাক্ত করেন। তিন বছরের এই শিশু আধা কিলোমিটার দূর থেকে কীভাবে এখানে এল, সেটি রহস্যজনক। আবার যে ট্যাংক থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটির উচ্চতা প্রায় ছয় হাত, এর কোনো ঢাকনাও ছিল না। সাধারণত সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসের কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু ঢাকনাছাড়া ছোট আকারের এই ট্যাংকের ভেতর শিশুটি কীভাবে মারা গেল, সেটি পরিষ্কার নয়।
শিশুর মা আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে আশরাফুলকে রুটি খাওয়াইছি। এরপর সে উঠানে বসে আরও শিশুর সঙ্গে খেলা করছিল আর আমি ভাত রান্না করছিলাম। সাড়ে ১০টার পর থেকেই তাকে ঘরে, ঘরের বাইরে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে এখানে এসে দেখি, এই লাশ আমার ছেলে আশরাফুলের। সে কীভাবে কার সঙ্গে এত দূরে চলে এল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা জরিনা বেগম বলেন, তিনি গোসল করতে যাওয়ার সময় নির্মাণাধীন বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক–সংলগ্ন স্থানে এক কিশোরী ও এক শিশুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। পরে গোসল থেকে ফেরার সময় দেখেন, ওই কিশোরী দৌড়ে চলে যাচ্ছে। ওই সময় কিশোরীর সঙ্গে শিশুটি ছিল না।
লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আল আমিন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম শহীদুল ইসলাম, নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান প্রমুখ।
জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে শিশুর শরীরে দৃশ্যমান আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।