খায়রুল কবিরের গাড়িবহর থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের

নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। গতকাল শনিবার রাতে নরসিংদী প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবিরের (খোকন) গাড়িবহর থেকে গুলি ও ককটেল ছুড়ে মারার অভিযোগ করেছেন নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। গতকাল শনিবার রাতে নরসিংদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তাঁরা। তবে খায়রুল কবিরের দাবি, তাঁদের বহনকারী গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা।

নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠনের পর থেকে তাঁদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের জেরে বিভাজিত হয়ে পড়েছে জেলা বিএনপি।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলি ও ককটেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ৮টার দিকে নরসিংদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের কয়েকজন। হাতে-মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে তাঁরা ওই সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ফাহিম রাজ অভিযোগ করেন, রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নেছার উদ্দিন আহমেদের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য গতকাল তাঁরা নরসিংদী থেকে ৮ থেকে ১০ জন রওনা হন। গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য শিবপুরের ইটাখোলা মোড়ে তাঁরা গাড়ি থামান। এ সময় হঠাৎ জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী তাঁদের ওপর হামলা চালান। প্রতিহত করতে গেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির তাঁদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় তাঁর গাড়িবহর থেকে ককটেল ছুড়ে মারা হলে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।

খায়রুল কবিরের অভিযোগ, ‘রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সভাপতির জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য চারটি মাইক্রোবাসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বের হয়েছিলাম। বেলা ১১টায় আমাদের গাড়িবহর শিবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ের একটি রেস্টুরেন্টের সামনে একজন কর্মীর জন্য অপেক্ষা করছিল। ওই সময় ২০ থেকে ২৫ জন সমর্থককে নিয়ে পদবঞ্চিত নেতারা এগিয়ে এসে আমাদের গাড়িবহরে হামলা চালান।’

পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল কবির বলেন, ‘আমাদের গাড়ি থেকে কোনো গুলি বা ককটেল ছোড়া হয়নি। বরং তারাই এসব করেছে। এর আগে ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণার দিন রাতে তারাই আমার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ওই ঘটনায় মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও তা মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ।’

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, ঘটনার সময় তিনটি গুলির শব্দ শোনা গেছে এবং একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ঘটনাস্থল থেকে মাথায় আঘাত পাওয়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী সোহেল ওরফে শুভকে আটক করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির অন্য তিনজন হলেন সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব ভূঁইয়া।

বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁর সমর্থকেরাই কমিটি ঘোষণার পর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান। এরপর থেকেই কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব থাকা অবস্থায় ৩১টি মামলায় অন্তত ২০ বার জেল খেটেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পাইনি। অথচ কোনো কর্মকাণ্ড না থাকার পরও বড় একজন নেতার ভাতিজা হওয়ায় একজন সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন। বিষয়টি মানতে না পেরে আমাদের সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’