বরগুনায় সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীর অবস্থান কর্মসূচি

বরগুনায় সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তাঁর পরিবার। আজ দুপুরে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বরগুনার সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ (৪৭) হত্যার ঘটনায় মামলার দায়েরের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তাঁর পরিবার। তালুকদার মাসউদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্বী (২৫) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছেলে তানহা তালুকদার (১২) সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। দুই সন্তানকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নিহত মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম অবস্থান নেন। তাঁরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

মামলার বাদী সাজেদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরেও আমার স্বামীর হত্যাকারীদের এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামিরা যেসব গণমাধ্যমে কর্মরত, সেই গণমাধ্যমগুলোও অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তারা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ তো করেইনি, উল্টো এখনো আসামিদের বহাল রেখে আমাদের ন্যায়বিচার পেতে অসহযোগিতা করছে।’

আরও পড়ুন

বরগুনার জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাজেদা বলেন, ‘আপনি আমাদের জেলার অভিভাবক। আমি বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, আমার স্বামীর হত্যাকারীরা কার ছত্রচ্ছায়ায় আছে? আমার সন্তানেরা আমাকে প্রশ্ন করে, “বাবার হত্যাকারীরা এখনো কীভাবে ফেসবুকে নানা উল্লাসের ছবি ছাড়ছে? আমাদের দেশে তো অনেক প্রযুক্তি, বাবার হত্যাকারীরা ধরা পড়ছে না কেন?”’

পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ করে নিহত মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন কি এতই দুর্বল যে একজন আসামিকে তারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যেদিন আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সেই দিন আমার কাছে ২০ লাখ টাকা দিয়ে সমঝোতার জন্য তারা লোক পাঠিয়েছিল। এখনো প্রতিদিন প্রেসক্লাবের লোকজন আমাকে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় এবং সমঝোতায় না গেলে সমস্যায় ফেলার হুমকি দেয়। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে ভয়ে আছি। আপনি আসামিদের গ্রেপ্তার করে আমাদের সুরক্ষা দিন।’

দুপুর ১২টার দিকে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম এসে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাজেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। এরপর সাজেদা বেগম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেন।

আরও পড়ুন

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক মাসউদ তালুকদার হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’

দুপুর ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম এসে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। আজ বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর পরিবারের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি। মামলার আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনবে।’

তালুকদার মাসউদ দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে তালুকদার মাসউদকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে খবর পেয়ে বরগুনা সদর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ৪ মার্চ দুপুরে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে সাতজন সাংবাদিক।

এ ঘটনায় হওয়া মামলার আসামিরা হলেন এনটিভির বরগুনা জেলা প্রতিনিধি আ স ম হাফিজ আল আসাদ ওরফে সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন, ডিবিসি নিউজের আবদুল মালেক, সময় টেলিভিশনের সাইফুল ইসলাম, মোহনা টেলিভিশনের জাফর হোসেন হাওলাদার, এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরিফুল ইসলাম (২৮), এখন টিভির ক্যামেরাপারসন এ এস এম সিফাত (২৭) এবং তাঁদের সহযোগী মো. কাসেম হাওলাদার (৩০), মো. ছগির হোসেন (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫) ও শহিদুল ইসলাম (৪৫)।