ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদী থেকে বালু তুলে ছাওয়ালপাড়া ঘাটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে বালু নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

দুই বছর আগেও ছোট যমুনা নদীর ছাওয়াল ঘাটের পূর্ব দিকে ১০ শতক জমিতে আবাদ করেছিলেন ইসাহাক আলী। এ বছর তিনি মাত্র এক শতক জমিতে চাষ করতে পেরেছেন। কারণ, বাকি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। ইসাহাক আলীর বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের ছাওয়ালপাড়া গ্রামে। এলাকার অনেক কৃষকের জমি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ছোট যমুনা নদীর ছাওয়ালপাড়া ঘাট থেকে বালু তোলা শুরু হয়। প্রথমে দিকে নদীর উপরিভাগের বালু কেটে নেওয়া হয়েছিল। তখন নদীপারের আবাদি জমির কোনো ক্ষতি হয়নি। ২০১৪ সালের পর থেকে নদীতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু তোলা শুরু হয়। এতে নদীপারের আবাদি জমি বিলীন হতে থাকে। তখন প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। তখন জমির মালিকেরা কম দামে বালু উত্তোলনকারীদের কাছে জমি বিক্রি দেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। বালু না থাকায় দুই বছর ধরে ছাওয়ালপাড়া বালুঘাট ইজারা বন্ধ রয়েছে।
সালেহীন তানভীর গাজী, জেলা প্রশাসক

নদীর ছাওয়ালপাড়া ঘাটের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের প্রায় ২০ একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। গত দুই বছর সেখানে বালুমহাল ইজারা বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। তবে বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন থেমে নেই। স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে। দু-এক দিন বন্ধ থাকার পর আবার বালু তোলা শুরু হয়।

এদিকে ছাওয়ালপাড়া ঘাটে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে বালু তোলার কারণে সেখানে নদীর গভীরতা বেড়ে গেছে। সমীক্ষার পর সেখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বাতিল করা হয়েছে।

সম্প্রতি ছোট যমুনা নদীর ছাওয়ালপাড়া গিয়ে দেখা যায়, ছোট যমুনা নদীর ছাওয়ালপাড়া ঘাটে ছয়-সাতটি ট্রাক্টর ভিড়েছে। নদী থেকে বালু তুলে ওপরে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে বালু নেওয়া হচ্ছে। একজন ব্যক্তি টংঘরে বসে বালু বিক্রির স্লিপ দিচ্ছিলেন। কত ট্রাক্টর বালু গেল তার হিসেব রাখছিলেন। বালু বিক্রির রসিদে ইজারাদার মামুনুর রশিদ নাম লেখা রয়েছে। নিচে মুঠোফোন নম্বরের ডান পাশে রাজু লেখা রয়েছে। ট্রাক্টরচালকেরা জানান, প্রতি ট্রাক্টর বালু ৬০০ টাকা। গাড়িভাড়াসহ তাঁরা দূরত্ব অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন।

টংঘরে থাকা ওই ব্যক্তি নিজেকে রাজু পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি বালুঘাটের কর্মচারী। তিনি প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে বেতন পান। জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়রের এপিএস মামুনুর রশিদ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন বালু উত্তোলন করছেন।

মামুনুর রশিদ ও জাকারিয়া হোসেন রাজা বলেন, তাঁরা ২০১৯ সালে বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন। প্রশাসন ইজারার টাকা নিয়েছে। কিন্তু বালুমহাল বুঝিয়ে দেয়নি। বালুমহাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাঁরা অবৈধভাবে বালু তুলছেন না।

ভাদসা ইউপির চেয়ারম্যান সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘কে বা কারা বালু উত্তোলন করছে, সেটি বলতে পারব না। ছাওয়ালপাড়া ঘাটে একটি সেতু হওয়ার কথা ছিল। সেখানে গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি আর হয়নি।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। বালু না থাকায় দুই বছর ধরে ছাওয়ালপাড়া বালুঘাট ইজারা বন্ধ রয়েছে। এই ঘাট থেকে বালু উত্তোলন প্রতিরোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়েছে। বালু তোলা বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’