আদালত
প্রতীকী ছবি

জঙ্গল থেকে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নৈশপ্রহরী আবদুল বাসেদ পাইকারের (৪৮) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার একজন বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ট্রাকচালক ওই ব্যক্তি আদালতকে বলেছেন, নৈশপ্রহরী আবদুল বাসেদকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা করা হয়নি। ভোররাতে উল্টো দিকে ঘোরানোর সময় তাঁর বালুবাহী ট্রাক দুর্ঘটনাবশত ওই নৈশপ্রহরীর ওপর উঠে যায়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লাশ সেখান থেকে সরিয়ে জঙ্গলে ফেলে রাখেন তিনি। এ কাজে ট্রাকের সহকারী তাঁকে সহায়তা করেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় নিহত আবদুল বাসেদের ছেলে মো. রজিবের অভিযোগ বগুড়া সদর থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় বগুড়া সদর থানায় সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে। ট্রাকচালক ও ট্রাকের সহকারীকে আসামি করা হয়েছে।

আবদুল বাসেদের স্ত্রী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, আবদুল বাসেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছিল। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখন দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হচ্ছে। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত চান তাঁরা।

যে মুঠোফোন নম্বরে আবদুল বাসেদের স্ত্রীর (নাম শোনা হয়নি) সঙ্গে কথা হয়, ওই নম্বরটি পরে বন্ধ পাওয়া যায়।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, নৈশপ্রহরীর লাশ গুমের ঘটনায় ট্রাকচালক ইজাজুল ইসলাম ওরফে আপেলকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি সোনাতলা উপজেলার কোড়াডাঙা গ্রামে। তিনি বুধবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্কৃতি হাগিদকের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিসিক শিল্প এলাকার সড়কের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে ছিলেন নৈশপ্রহরী আবদুল বাসেদ। ভোররাতে উল্টো দিকে ঘোরানোর সময় তাঁর বালুবাহী ট্রাক নৈশপ্রহরীর ওপর উঠে যায়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লাশ সেখান থেকে সরিয়ে জঙ্গলে ফেলে রাখেন ইজাজুল ইসলাম।

নিহত আবদুল বাসেদ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাইকারপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে। বিসিক শিল্পনগরীর শাওন ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত সোমবার রাতে ডিউটিতে ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে বিসিক শিল্পনগরী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার হয়। পরে পুলিশ আবদুল বাসেদের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

বগুড়ার বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আজিজার রহমান বলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর চারজন নৈশপ্রহরীর মৃত্যুর ঘটনার পর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নৈশপ্রহরীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছেন। ভয়ে-আতঙ্কে কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিতে চাইছেন।