প্রকৃতির পাঠশালায় খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান 

যশোরের নব কিশলয় স্কুল ক্যাম্পাসে প্রকৃতির পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে গোলপাতা, গাবগাছ, বাঁশ দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। 

যশোর শহরের নব কিশলয় স্কুল ক্যাম্পাসে পুকুরধারের হিজলতলায় ‘প্রকৃতির পাঠশালা’ গড়ে তোলা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

যশোর শহরের নব কিশলয় স্কুল ক্যাম্পাসে শাপলা ফোটা পুকুরপাড়ের হিজলতলায় ‘প্রকৃতির পাঠশালা’ গড়ে তোলা হয়েছে। গোলপাতার ছাউনি দেওয়া দোচালা ঘরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পিঁড়ির ওপর বসে খুদে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করছে। ইট–কাঠের শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম সৃষ্টিতে যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান এই পাঠশালা স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

বুধবার এই শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছতলায় পাঠদানের মতো নব কিশলয় স্কুল ক্যাম্পাসে এই প্রকৃতির পাঠশালা করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘শাপলা ফোটা পুকুরপাড়ের হিজলগাছের তলায় গোলপাতার ছাউনিতে বসে প্রাকৃতিক পরিবেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করবে। এতে ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি প্রেম জাগ্রত হবে। তাদের মধ্যে উদারতা বাড়বে। এই ভাবনা থেকেই স্কুল ক্যাম্পাসে এমন নান্দনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

নব কিশলয় স্কুল ক্যাম্পাসে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকের ডোবা পুকুর সংস্কার করে শাপলা ফুল ফোটানো হয়েছে। পুকুরপাড়ে হিজলগাছের তলায় মাটির ঢিবির মতো তৈরি করে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর পাশে গোলপাতার ছাউনির দোচালা একটি উন্মুক্ত ঘর বসানো হয়েছে। প্রচণ্ড রোদবৃষ্টিতে শিক্ষার্থীরা যাতে ওই ঘরে অবস্থান করতে পারে। এই পাঠশালায় কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। মাটিতে পিঁড়ায় বসতে হয়।

পিঁড়িতে বসে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে একাডেমিক পড়াশোনা করে। তাদের সামনে একটি সাদা বোর্ডে শিক্ষক দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বিষয় লিখে বুঝিয়ে দেন। মাঠে আনন্দঘন পরিবেশে পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই দৃশ্য অনেকটা শান্তিনিকেতনের আদল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বর্ণ পাল তুলি বলেন, ‘আসলে এটি একদম নতুন উদ্যোগ। ব্যতিক্রম বলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ সময়ের শিক্ষার্থীরা জানে না পাঠশালা কী। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে পড়াশোনায় তারা আরও আগ্রহী হবে।’

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফারহান তানিসা ও তাসজিয়া জান্নাত নামের দুই শিক্ষার্থী জানায়, তারা এমনটাই চেয়েছিল। প্রকৃতির মাঠে আনন্দদায়ক পরিবেশে ক্লাস করতে তাদের খুব ভালো লাগছে বলে জানায় তারা।

নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসরুমে ক্লাস করি। এই উদ্যোগ ছিল একজন স্থপতির। আর যশোরের জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এটাই দেশের দ্বিতীয় স্কুল। এর আগে খাগড়াছড়িতে একটি স্কুল হয়েছিল। আর দ্বিতীয়টি যশোরের নব কিশলয় স্কুলে নির্মাণ করা হলো।’