কয়রায় ঘুরে ঘুরে ভবঘুরেদের খাবার দেন তাঁরা

কয়রা ব্লাড ব্যাংক-ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরেদের খাবার দিচ্ছেন এক স্বেচ্ছাসেবী। সোমবার ২৪ জুলাই কয়রা বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষের জন্য প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন খুলনার কয়রা উপজেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণেরা। রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া ক্ষুধার্ত ভারসাম্যহীন মানুষের খাবারের কষ্ট দেখে ২০২০ সালের ২ জুন এমন উদ্যোগ নেন তাঁরা। সেই থেকে তাঁরা এখন পর্যন্ত প্রতিদিন এমন ৬ থেকে ৮ জনকে দুপুরের খাবার দিচ্ছেন। তাঁদের এমন উদ্যোগ এলাকায় এবং এলাকার বাইরে প্রশংসিত হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির নাম কয়রা ব্লাড ব্যাংক-ফুড ব্যাংক। সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার তরুণদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের খাবার জোগানোর পাশাপাশি জরুরি মুহূর্তে রোগীদের জন্য রক্ত সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, গরিব অসহায় রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, দুর্যোগকালীন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, গরিব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কাজ করে থাকেন। মূলত সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে এসব কাজ করেন। স্থানীয় কয়েকজন বিত্তবান তাঁদের সাহায্য করেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির উদ্যোক্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কয়রা ব্লাড ব্যাংক-ফুড ব্যাংকের যাত্রা শুরু। শুরুটা হয়েছিল কয়রা উপজেলা সদরের কয়েকজন উদ্যমী তরুণের হাত ধরে। সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০। ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ সদস্যই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন।

কয়রা ব্লাড ব্যাংক-ফুড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়রার বিভিন্ন এলাকার ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের দুপুরবেলার খাবার দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া সাড়ে চার হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত সরবরাহ করেছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে দেখা যায়, সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা কয়রা বাজারের একটি খাবারের হোটেল থেকে খাবারের প্যাকেট নিচ্ছেন। খাবারের মেনুতে ছিল ভাত, মুরগির মাংস ও সবজি। খাবার নিয়ে প্রথমে তাঁরা কয়রা মহিলা কলেজের পাশের একটি ছাউনির নিচে থাকা এক ভবঘুরেকে দেন। এভাবে আশপাশে থাকা ছয়জনের কাছে খাবার পৌঁছে দেন তাঁরা।

খাবার দিতে দিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সভাপতি সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় হাঁটতে, চলতে-ফিরতে কত মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষই তো আমরা দেখি। তাঁদের নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা, অনেকে দ্বিতীয়বার তাকাতেই সংকোচ বোধ করেন। অথচ তাঁদেরও মানুষের মতো বাঁচার অধিকার আছে। এই অনুভূতি থেকেই আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কয়রার মঠবাড়ি গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘২৫ বছর আগে আমার স্বামী আলাউদ্দীন সরদার মারা যান। এরপর নিরুপায় হয়ে ভিক্ষা করতাম। এখন প্রতি মাসে ছেলেগুলো (সংগঠনের সদস্য) আমারে বাজার সদাই করে দেয়।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সংগঠনটির উদ্যোগগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাঁরা সত্যিকারের মানবপ্রেমী।