গাছটির শিকড় থেকে বেরিয়ে এসেছে ‘কুমির’, আর ঝুরি থেকে ‘হাতি-ঘোড়া’

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামে বিশাল বটগাছের ঝুরি থেকে হাতি–ঘোড়াসদৃশ প্রাণীর আকৃতি তৈরি হয়েছেছবি: প্রথম আলো

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামে একটি বিশাল বটগাছ দেখলে চোখ ফেরানো দায়। গাছটির শিকড় থেকে যেন বেরিয়ে এসেছে ‘কুমির’, আর ঝুরি থেকে তৈরি হয়েছে হাতি ও ঘোড়ার মতো আকৃতি। প্রকৃতির এমন বিস্ময়কর রূপ দেখতে দূর–দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রায় ১০ বিঘা জমিজুড়ে বিস্তৃত এই বটগাছ।

কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের তীরে মেহেরপুর গ্রাম। ধারণা করা হয়, পীর হজরত মেহের উদ্দীন (রহ.)-এর নাম অনুসারে গ্রামের নামকরণ হয়েছে। তাঁর মাজারের পাশেই অবস্থিত এই বটগাছ।

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, বটগাছটি প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত। স্থানীয় লোকজনের মুখে শোনা যায়, এটি ১৬ বিঘা পর্যন্ত ছড়িয়েছে। আসল গাছটি কোনটা, তা বোঝার উপায় নেই। পূর্বপুরুষদের মতে, গাছটির বয়স পাঁচ থেকে সাত শ বছর হতে পারে।

বিশাল বটগাছের একটি শিকড় দেখতে কুমিরের মতো
ছবি: প্রথম আলো

বটগাছটি যে এলাকায়, সেখানে ঢোকার আগে প্রথমে চোখে পড়ে ঝুরি দিয়ে গড়া এক সুদৃশ্য তোরণ। ভেতরে ঢুকলে দেখা যায়, ঝুরিগুলো হাতি–ঘোড়ার আকৃতি নিয়েছে। শিকড়গুলো কুমিরের মতো হয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন কিছু শিকড় রং করে কুমিরের মতো সাজিয়ে রেখেছেন। এগুলোই পর্যটকদের টানে।

এলাকাটি নিস্তব্ধ ও কোলাহলমুক্ত। বসন্তকালে কামিনী ও বকুল ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে যায়। প্রচণ্ড গরমে গাছের ছায়ায় শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। শিকড় ও ঝুরির গঠন দেখতে দেখতে মন ভরে যায় দর্শনার্থীদের।

বটগাছের এলাকায় ঢোকার আগেই প্রথমে চোখে পড়ে ঝুরি দিয়ে গড়া এক সুদৃশ্য তোরণ
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবছর পয়লা জ্যৈষ্ঠ এই বটগাছের এলাকায় মেলা বসে। দূর–দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। বাউল, মারফতি ও মুর্শিদি গানের আসর বসে। এলাকাটি এখন পর্যটনের বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবছর ২৫ জানুয়ারি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে যাওয়া দর্শনার্থীরাও এই বটগাছ দেখতে ভিড় জমান।

দর্শনার্থী হিসেবে আসা মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হাসানুল সিরাজী বলেন, তাঁর বাড়ি খুলনা শহরে। তিনি অনেক দিন আগে কেশবপুরের এই বিশাল বটগাছের কথা শুনেছিলেন। এখানে এসে দেখে মনে হলো, শোনার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর এই জায়গা। আবার আসবেন পরিবার নিয়ে।

প্রায় ১০ বিঘা জমিজুড়ে বিস্তৃত এই বটগাছ দেখতে আসেন স্থানীয় ও বাইরের দর্শনার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেকসোনা খাতুন বলেন, কেশবপুর একটি পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলা। এলাকাটি খুব সুন্দর ও মনোরম। সেটিকে পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।