কাশিমপুর কারাগারে কয়েদির লাশ উদ্ধার: স্বজনদের সন্দেহ ‘হত্যা’
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল শনিবার আমিরুল ইসলাম ওরফে রাশেদউদ্দীন নামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে কয়েদির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁর স্বজনদের সন্দেহ, তাঁকে কারাগারের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাঁদের সন্দেহ কার দিকে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলেননি।
আজ রোববার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে আমিরুলের লাশ নিতে আসেন তাঁর বড় ভাই নূর গনি কামালসহ চার স্বজন। সেখানে বেলা ১১টার দিকে নূর গনি কামাল এমন সন্দেহের কথা বলেন।
নূর গনি কামাল বলেন, ‘আমরা নিজেদের বুঝাইতে পারতেছি না, ভাই কেন মরল? ভাই মরলে তো আরও আগেই মরতে পারত। আমরা ভাইয়ের জামিনের কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। আমাদের হিসাব হচ্ছে, হেরা চক্রান্ত কইরা মাইরা ফালাইছে। কী দোষ বা কী কারণে হেরা মাইরা ফালাইল? আমার ভাই অসুস্থ নাই, কিছু নাই, খামাখা মরতে যাবে কেন? তাঁর আত্মহত্যা করার যুক্তিটা কী?’
শনিবার ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমিরুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। কারাগারের একটি টয়লেটে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আমিরুল নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মধ্যম চেঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌকিদারের ছেলে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
আমিরুলের লাশ উদ্ধারের পর গতকাল কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগারের বিছানার চাদরের অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আজ বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের পাশে মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তির বড় ভাই নূর গণি কামাল, ভাগনে ছমির উদ্দিন, ভগ্নিপতি শফিকুল ইসলাম ও বোনের দেবর তৈয়ব হোসেন লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পাশে দুজন কারা কর্মকর্তাকেও দেখা গেছে। বেলা একটার দিকে লাশটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাজহারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিরুল ইসলামের গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যেহেতু বন্দী এবং তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) বলছে আত্মহত্যা করেছে, তাই নিহতের গলার চামড়া এবং ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর প্রতিবেদন এলে আমরা একটা প্রতিবেদন দেব। তখনই বলা সম্ভব হবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কী চক্রান্ত হতে পারে? এখানে কার স্বার্থ আছে যে তাঁকে মেরে ফেলতে পারে?’