ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতির চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৫

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতিচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজন। বুধবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে।
ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ওই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁরা। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও ডাকাতি শুরু করেছে চক্রটি।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির চেষ্টার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, ডাকাতেরা ডাকাতির জন্য এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। চালক ডাকাতদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গাড়ি পেছনের দিকে নিতে থাকেন। এ সময় রামদা ও লাইট হাতে বেরিয়ে আসতে থাকে ডাকাতেরা। চালক তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গাড়িটি নিরাপদে সরিয়ে নেন। ডাকাতি করতে না পেরে গাড়ি লক্ষ্য করে রামদা ছুড়ে মারে ডাকাত দলের এক সদস্য।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. সামসুল আলম সরকার। ডাকাত দলের গ্রেপ্তার সদস্যরা হলেন পটুয়াখালীর ছোট বাইজদা এলাকার মো. কামাল ওরফে সিএনজি কামাল (৪০), একই এলাকার মো. ইসমাইল সরদার (৩৮), মাদারীপুরের কালকিনী এলাকার বাসিন্দা মো. রমজান ব্যাপারী (২৭), পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলাকার মো. রাসেল মোল্লা (২৪) ও মাদারীপুরের কুনিয়া এলাকার মো. লিমন মাতব্বর (২০)। গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা সবাই ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

এ ঘটনায় শ্রীনগর থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত তিনটি ছেনদা উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার সামসুল আলম।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ডাকাতদের ভিডিওটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। ঘটনার বিষয়টি অনুসন্ধান করা হয়। পরে জানা যায়, মো. রবিউল আলম (৩০) নামের এক ব্যক্তি মাদারীপুরের শিবচর থেকে তাঁর গাড়িতে করে এক অসুস্থ প্রতিবেশীসহ চারজনকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ী এলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির চাপ দেখেন। দ্রুত যাওয়ার জন্য রবিউল গাড়ি নিয়ে ঢাকামুখী বাঁ পাশের সার্ভিস লেন দিয়ে চলতে থাকেন। গাড়িটি ষোলঘর এলে রাস্তার ওপর শণের কিছু আঁটি দিয়ে তৈরি করা একটি ব্যারিকেড দেখতে পান। তিনি গাড়ি থামাতেই রাস্তার নিচ থেকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র সজ্জিত ছয়জন ডাকাত অস্ত্র উঁচিয়ে গাড়িতে আক্রমণ করতে ছুটে আসে। তাদের একজন গাড়ির ডান পাশে আঘাত করতেই চালক রবিউল অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গাড়িটি দ্রুত পেছনের দিকে চালনা করেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ডাকাত দল গাড়িটিকে ধরার জন্য অস্ত্রসহ ধাওয়া করে। কিন্তু গাড়িটিকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে একজন ডাকাত ক্ষোভে তার ধারালো অস্ত্রটি গাড়ির দিকে ছুড়ে মারে। পুরো ঘটনাটি গাড়ির ক্যামেরায়ও রেকর্ড হয়। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে মুন্সিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযান শুরু করে। পরে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত পাঁচ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।